২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই যেমন হাসি ফিরেছে পাহাড়ের, তেমনই গত ৮ বছরে উন্নয়নের ছোঁয়ায় ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলের পরিকাঠামোগত চেহারাটা যে অনেকটাই পাল্টে গেছে, বিরোধীরা পর্যন্ত সে কথা একবাক্যে স্বীকার করে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে জঙ্গলের বুক চিরে ঝাঁ চকচকে পিচ ঢালাপথ চলে গেছে লোধাশুলি, বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর ইত্যাদি জনপদে। আগে খোদ শহর ঝাড়গ্রাম থেকে লালগড় বা নয়াগ্রাম যেতে বহু ভোগান্তি হত সাধারণ মানুষের।
বাম আমলে গোটা এলাকায় ছিল হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিস্তার ছিল না। ঝাড়গ্রাম শহরে ছিল একটাই পলিটেকনিক কলেজ, আইটিআই কলেজ। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলে হয়েছে একাধিক পলিটেকনিক কলেজ, আইটিআই কলেজ, মহিলা কলেজ, নার্সিং কলেজ, এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠতে চলেছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামকে আলাদা জেলার মর্যাদা দেওয়ার পর তার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য নিজে জোর দিয়েছেন। ঝাড়গ্রাম তথা জঙ্গলমহলে তৃণমূল সরকারের আমলে যে প্রচুর পরিমাণে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, সিপিএমের মতো বিরোধী দলের নেতারা পর্যন্ত তা মানছেন।
শাসক দলের পক্ষ থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি উন্নয়নের প্রচার সে ভাবে না পৌঁছলেও গত ৮ বছরের উন্নয়ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ কৃষক খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা জেলা তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য অশোক মহাপাত্র বলেন, ‘১৯৭৯ সাল থেকে আমি কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূল তৈরি হওয়ার দিন থেকে তৃণমূলের একজন কর্মী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল আমলে ঝাড়গ্রাম তথা জঙ্গলমহলে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল-সহ সার্বিক যে উন্নয়ন হয়েছে তা আগে কখনও দেখিনি।’
তাঁর কথায়, ‘এই সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে অন্য রকম পদক্ষেপ করেছে। এক একর চাষযোগ্য জমি যাঁদের আছে, তাঁরা বছরের দুটো মরশুমে আড়াই হাজার টাকা করে মোট পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। আর যাঁদের এক একরের কম জমি আছে, তাঁরা দুটো মরশুমে এক হাজার করে মোট দু’হাজার টাকা পাবেন। যদি এই সরকার কৃষিক্ষেত্রে ভাল কিছু না করত, তা হলে কেন্দ্র সরকার কৃষিকর্ম পুরস্কার দিত? গত ২০১১ সাল থেকে পরপর পাঁচবার এই রাজ্যকে এই পুরস্কার দিয়েছে।’
অশোকবাবু জানান, ‘২০১১ সালের আগে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ১০-১২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে স্কুলে যেতে হত। টেকনিক্যাল পড়াশোনার জন্য ঝাড়গ্রামের সেবায়তনে একটি মাত্র পলিটেকনিক কলেজ ছিল। এখন রামগড়ে শুধু পলিটেকনিক কলেজ নয়, ব্লকে ব্লকে হয়েছে আইটিআই ইনস্টিটিউট। শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। আগে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে মানুষ ভয়ে যেতে চাইত না। এখন অন্য চেহারা হাসপাতালের। ঝাঁ চকচকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সঙ্গে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর কী চাই? সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।।’
এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের টাউন কমিটির সক্রিয় সদস্য রিঙ্কা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বিগত দিনে এই ধরনের উন্নয়ন দেখা যায়নি। বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মা-মাটি-মানুষের সরকার রাজ্য জুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী, কৃষক, মহিলা, সাধারণ মানুষ সকলের কথাই ভাবছে। রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী, গতিধারা-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে সাহায্যও পাচ্ছেন তাঁরা। ঝাড়গ্রামে আগে জন্মলগ্ন থেকে বাম পুরবোর্ডকে দেখেছি। কিন্তু আজ বোঝা যাচ্ছে, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড শহরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছে, মানুষ এখন তার সুফল পাচ্ছেন।’
যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার বক্তব্য, ‘এর আগে বাম আমলে এই উন্নয়ন ছিল না। ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে ওরা কী উন্নয়ন করেছে, মানুষ দেখেছে। বর্তমানে দিদির আমলে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদির যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সাধারণ মানুষ যে সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন, তা সকলেই দেখছেন। এই সরকারের আমলে মানুষ সত্যি উপকৃত হচ্ছেন।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘ঝাড়গ্রাম যে জেলা হবে, এটাই কি কেউ ভেবেছিল? আদিবাসীরা বঞ্চিত ছিল। এই সরকার আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করে চলেছে। অলচিকি লিপিতে পড়াশোনা করানোর জন্য পাঠ্যপুস্তক তৈরি, অলচিকি লিপি জানা সঁাওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ, সবই করছে।’
এই প্রসঙ্গে এক সময়ের সিপিএমের ডাকাবুকো নেতা তথা ঝাড়গ্রাম জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক সিপিএম নেতা রবি সরকার সরাসরি স্বীকার করে নেন, ‘রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের উন্নয়ন হয়েছে।’ আবার ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিনপুরের বিধায়ক থাকা, সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা কৃষক সভার জেলা সম্পাদক দিবাকর হাঁসদাও বলেন, ‘জঙ্গলমহলে সেতু, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, কলেজ, বিদ্যুতের আলো–সহ পরিকাঠামোগত যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে।’