গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিনে ভালবাসা, শান্তির বদলে রক্ত, কান্না, আর্তনাদে ছেয়ে গেছিল গোটা দেশ। বিস্ফোরণে নিহত ৪৪ জন জওয়ানের জন্যে কেঁদে উঠেছিল সবাই। এই ঘটনার জেরেই জঙ্গী নিধন করতে পুলওয়ামার পিংলিশ গ্রামে অভিযান চালায় সেনা। পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড কামরান-সহ তিন জঙ্গীকে নিকেশ করে সেনা। সেই অভিযানে গিয়েই জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান ভারতীয় সেনার মেজর বিভূতিশঙ্কর ধৌনদয়াল। এছাড়া সেপাই হরি সিংহ ও অজয় কুমার, হাবিলদার শেও রাম, এবং জম্মু কাশ্মীরের হেড কনস্টেবল আবদুল রশিদ কলসও নিহত হন। গতকাল মেজর ধৌনদয়ালের মৃতদেহ ছুঁয়ে শেষবার তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘আই লাভ ইউ’।
নিহত মেজর ধৌনদয়ালের দেহ সোমবার গভীর রাতে দেরাদুনে পৌঁছয়। সেখান থেকে সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয় হরিদ্বারে তাঁর বাড়িতে। মঙ্গলবার সেখানেই রাখা ছিল মৃতদেহ। বাড়িতে পাড়া প্রতিবেশীদের ভিড় তো রয়েছেই, সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তারাও হাজির। তার মধ্যেই তিরঙ্গায় মোড়া কফিনের মাথার কাছে বসে রয়েছেন স্ত্রী নিকিতা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের আগে এটাই ছিল নিকিতা-ধৌনদয়ালের অন্তিম সাক্ষাৎ। সেখানেই শেষবার তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে আসেন। স্বামীকে শেষ বারের মতো চুমু দিলেন স্ত্রী নিকিতা কল। শেষ বার বললেন, ‘আই লাভ ইউ’। এমন মর্মান্তিক দৃশ্যে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি কেউই। একটা বিকেল এভাবেই তছনছ করে দিয়েছে এমন অনেক মানুষের আবেগ, ভালোবাসা। বেঁচে থাকাটাকেই করে তুলেছে দুর্বিষহ।
বছরখানেক আগেই বিয়ে হয়েছিল ধৌনদয়াল-নিকিতার। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই স্বামীকে হারিয়ে শোকে কার্যত পাথর নিকিতা। চোখে জল নেই। দৃষ্টিতে অবাক শূন্যতা, বিহ্বলতা। স্বামীর কফিন আলতো করে খুলে ভিতরে স্বামীর মুখটা দেখে নিলেন নিকিতা। এর পর স্বামীর উদ্দেশে চুম্বন। তার পর মুখ নিচু করে অন্তিম শয্যায় শায়িত স্বামীর উদ্দেশ্যে অজান্তেই যেন নিকিতার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ‘আই লাভ ইউ’। স্বামী শহীদ হয়েছেন দেশের জন্যে। তবুও মৃত্যুকে মেনে নেওয়া সত্যিই অসম্ভব। স্বামীর সঙ্গে এই শেষ মুহূর্তটাই হয়তো বাকি জীবনের সম্বল হয়ে রইল নিকিতার কাছে।