শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এবার বায়ুদূষণ রুখতে মহানগরীতে চালু হবে ইলেকট্রিক বাস। এই বাসের দাম বেশি হলেও এটি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য অনেক বেশি। ব্যস্ত রুটে এই বাস নিয়মিত চালালে, নিজস্ব পেট্রল বা ডিজেল গাড়ির মায়া ত্যাগ করে অনেক যাত্রী ই-বাসে যাতায়াতে আগ্রহী হবেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নবান্ন থেকে এই ই-বাসের সূচনা করবেন। দূষণ মোকাবিলায় আগামীকাল থেকে কলকাতার পথে নামছে ২০টি ইলেকট্রিক বাস। সব ক’টিই বাতানুকূল। পুজোর সময় নিউ টাউনের মধ্যে হিডকো দু’টি ইলেকট্রিক বাসের পরিষেবা শুরু করে। হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশে আগেই চালু হয়েছে ই-বাস। এ বার পথচলা শুরু হবে খাস কলকাতায়। চলতি বছরেই শহরে প্রায় সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে পর্যায়ক্রমে ৮০টি ইলেকট্রিক বাস পথে নামানোর কথা। এই বাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার।
দু’রকম বাস কিনছে রাজ্য সরকার। ৯ মিটার দীর্ঘ ৩২ আসনের বাস। দাম ৭৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। প্রথম দফায় এই বাস ৪০টি আসবে। দ্বিতীয় দফায় আসবে ১২ মিটার দীর্ঘ ৪০ আসনের ৪০টি বাস। প্রতিটির দাম ৮৮ লক্ষ টাকা। বাসগুলি চার্জ দেওয়ার জন্য দু’রকম চার্জারও কিনছে রাজ্য। দ্রুত চার্জিং মেশিন কেনা হয়েছে ১৫টি। প্রতিটির দাম ১৫ লক্ষ টাকা। যা দু’ঘণ্টায় ফুল চার্জ হবে। এক সঙ্গে দু’টি বাসে চার্জ দেওয়া যাবে। স্লো চার্জারটি দাম ৯ লক্ষ টাকা। কেনা হচ্ছে ৬০টি। এতে লাগবে চার ঘণ্টা।
পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলেন, ‘কলকাতায় বাস-সহ সব ধরনের যানবাহনের গতি কম। বাস বা গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। তাই এখানে জ্বালানির খরচ, দূষণ দুটোই বেশি। কারণ, এই শহরে বাস-সহ যে কোনও যানবাহন চালাতে বারবার ক্লাচ ও ব্রেক ব্যবহার করতে হয়। গিয়ার বদলাতে হয়। এতে প্রতিবারের জন্য দশ গ্রাম তেল নষ্ট হয়। যা জ্বালানির খরচ বাড়িয়ে দেয়। বাড়ে দূষণও।’ ইলেকট্রিক বাসে সেই সমস্যা নেই। পরিবহণ দফতরের হিসেব বলছে, এসি বাস প্রতি ১.২৫ কিলোমিটার চলার জন্য এক লিটার জ্বালানি খরচ করে। সাধারণ বাসের ক্ষেত্রে তা ২-৩ কিলোমিটার। ইলেকট্রিক বাসের ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম। ইলেকট্রিক বাস একবার ফুল চার্জ দিলে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলার কথা। এই ই-বাস শ্যামবাজার-নবান্ন রুটে চলবে ১০টি। ৫টি করে চলবে টালিগঞ্জ-এয়ারপোর্ট এবং জোকা-নিউ টাউন রুটে। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম শহর জুড়ে ১৭টি চার্জিং স্টেশন তৈরির কাজ শুরু করেছে। দু’টি বাদে বাকিগুলির কাজ শেষ।