বিজেপির পক্ষ থেকে সবসময়েই বলা হয়েছে উপত্যকা এখন একদম শান্ত। কোথাও কোন ঝামেলা নেই। এই মনে হওয়া যে যে কতটা ভুল তা দেখিয়ে দিয়েছে গতকালের ভয়াবহ জঙ্গী হামলা। নিরাপত্তার গাফিলতির ফলে ভূস্বর্গের সৌন্দর্য ভরে উঠল ৪২ জওয়ানের রক্তে। ২০১৪ থেকে ২০১৯— মোদী জমানার এই পাঁচ বছরে তীব্র হয়েছে জঙ্গি নাশকতাও। জঙ্গী হামলায় বারে বারে রক্তাক্ত হয়েছে পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন অংশ।
দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব হামলার টার্গেট— নিরাপত্তা বাহিনী। প্রাণ গিয়েছে নিরীহ মানুষেরও। এই ধরনের ১০টি বড় হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯৪ জন পুলিশকর্মী ও জওয়ান।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মোদীর আমলে ঘটে যাওয়া ১০টি জঙ্গী হামলার চিত্র
১। ২০ মার্চ, ২০১৫: জম্মুর কাঠুয়া জেলার রাজবাগ থানায় আত্মঘাতী হামলা চালায় আত্মঘাতী জঙ্গী ৩ নিরাপত্তাকর্মী সহ ৬ জন নিহত হন, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১ জঙ্গী মৃত্যু হয়।
২। ২৭ জুলাই, ২০১৫: ভোরবেলা পঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার দীনানগর বড়সড় নাশকতা চালায় জঙ্গী। প্রথম টার্গেট করা হয় একটি যাত্রীবোঝাই বাস, তার পর গুরদাসপুর থানায় চলে গুলিবৃষ্টি। গোটা ঘটনায় ৪ পুলিশকর্মী প্রাণ হারান, মৃত্যু হয় ৩ নাগরিকের। ৩ জঙ্গীও নিহত হয়। পরে অমৃতসর— পঠানকোটের রেলব্রিজ থেকে ৫টি বোমাও উদ্ধার হয়।
৩। ২ জানুয়ারি, ২০১৬ পঠানকোট— খাস পশ্চিম এয়ারকম্যান্ডের সদর দফতরে ফিদায়েঁ হামলা। সেনাবাহিনীর পোশাকে নাশকতা আত্মঘাতী জঙ্গীদের। নিহত হন ৭ নিরাপত্তাকর্মী, খতম ৪ জঙ্গী।
৪। ২৪ জুন, ২০১৬: এ বার ঘটনাস্থল জম্মুর পাম্পোর। শ্রীনগর জম্মু জাতীয় সড়কে সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালাল লস্কর-ই-তইবা জঙ্গীরা। নিহত হন ৮ জওয়ান। নিরাপত্তাবাহিনীর পাল্টা আঘাতে ২ জঙ্গী মারা যায়। এরইমধ্যে ৬ জুলাই সেনার জঙ্গী দমন অভিযানে হিজবুল জঙ্গী বুরহান ওয়ানির মৃত্যু হয়। উপত্যকায় অশান্তির আগুনে ঘি পড়ে। বুরহানের মৃত্যুর বদলা নেওয়ার ডাক দেয় জঙ্গী সংগঠনগুলি। ঠিক তার দু’মাসের মধ্যেই উরিতে সেনার হেডকোয়ার্টারে আঘাত হানে জইশ-ই-মহম্মদ।
৫। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: ভোরে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলায় ১৯ সেনার মৃত্যু। নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ৪ জঙ্গীর মৃত্যু হয়।
৬। ৩ অক্টোবর, ২০১৬: ফের টার্গেট সেনা ঘাঁটি। এ বার হামলা হয় বারামুলায় রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ছাউনিতে। প্রাণ হারান ৩ জওয়ান। ২ হামলাকারীরও মৃত্যু হয়।এর ঠিক ৩ দিনের মধ্যে ফের সেনা ক্যাম্পে জঙ্গী হানা।
৭। ৬ অক্টোবর, ২০১৬: কুপওয়ারা জেলার হান্দওয়ারায় সেনা ক্যাম্পে হামলা চলে। সেনার গুলিতে নিহত ৩ জঙ্গীর থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার হয়।
৮। ২৯ নভেম্বর, ২০১৬: জম্মুর নাগরোটায় পুলিশের পোশাকে ৩ জঙ্গী সেনার ১৬৬ ফিল্ড রেজিমেন্ট ইউনিটের উপর হামলা চালায়। ১০ সেনার মৃত্যু হয়। হামলার দায় নেয় জইশ-ই-মহম্মদ।
৯। ১১ জুলাই, ২০১৭: এ বারও লস্কর জঙ্গিদের টার্গেট ছিল সিআরপিএফ এবং পুলিশ। তবে অনন্তনাগে সেই হামলার বলি হন সাধারণ মানুষ। জঙ্গীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় অমরনাথের যাত্রীবোঝাই বাস। প্রাণ যায় ৮ জনের।
১০। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯: শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কে সিআরপিএফ-এর কনভয়ে জঙ্গী হানা। জইশ-ই-মহম্মদের আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারালেন অন্তত ৪০ জওয়ান।