আবারও বিজেপির স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন বাংলার ‘বাঘিনী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদবকে আটক করার প্রতিবাদে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে মমতা বললেন, তথাকথিত বিজেপি নেতাদের এই অহংকারি মনোভাবকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এদিন দুপুর ২টো নাগাদ টুইট করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘আমি অখিলেশের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সকলে সেইসব তথাকথিত বিজেপি নেতাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের নিন্দা করছি, যারা অখিলেশকে ছাত্রদের সভায় যেতে দেয়নি, ভাষণ দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। এমনকি জিগনেশ মেবানিকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে গণতন্ত্র কোথায়? এবং তারা সকলকে সেই পাঠ দিচ্ছে!’ নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে এভাবেই ক্ষোভ উগড়ে দেন মমতা।
জানা গেছে, আজ, মঙ্গলবার সকালে লখনউ থেকে প্রয়াগরাজে যাচ্ছিলেন অখিলেশ সিং যাদব। বিকালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের এক অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ, তাঁকে লখনউ বিমানবন্দরে আটকে রাখে পুলিশ। এদিন সকালে টুইটারে এই অভিযোগ করেছেন অখিলেশ নিজেই। সপা নেতা ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আটকানো নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা।
অখিলেশের পাশে দাঁড়িয়ে এবং বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ওরা তো সোয়াইন ফ্লু নিয়েই বাংলায় এসে প্রোগ্রাম করে যাচ্ছে। আমরা তাদের অ্যালাউ করছি। আর দেখুন এদের নিজেদের রাজ্যে পুলিশ কোনও তদন্ত করলে খুন হয়ে যাচ্ছে। আরএসএস-এর লোকেরা বিজেপির সঙ্গে মিশে খুন-খারাপের রাজনীতি করছে।
প্রসঙ্গত, লখনউ বিমানবন্দর থেকে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে ছবিও পোস্ট করেছেন অখিলেশ। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্লেনের সিঁড়িতে এক পুলিশকর্মী দাঁড়িয়ে আছেন। প্লেনে ঢোকার রাস্তা বন্ধ। অপর একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অখিলেশ ট্যারম্যাকে দাঁড়িয়ে এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে তর্ক করছেন। অখিলেশের মিডিয়া টিম একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সাদা পোশাক পরা এক ব্যক্তি অখিলেশকে চৌধুরী চরণ সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকানোর চেষ্টা করছেন। অখিলেশ চিৎকার করছেন, হাত মত লাগাও। পরে এক ব্যক্তি তাঁকে ঠেলে সরিয়ে দিল। একটি সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক অফিসার।
সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সভা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ দখল করেছে। ছাত্র সংগঠনের সভাপতি অখিলেশকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। এদিন তাঁর শপথ নেওয়ার কথা ছিল। অখিলেশকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর সেই ছাত্রনেতা বলেন, এক ছাত্রনেতার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকেও ভয় পাচ্ছে সরকার। আমি যাতে এলাহাবাদে না যেতে পারি, সেজন্য আমাকে বিমানেই উঠতে দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রয়াগরাজ পুলিশের সাফাই, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই নাকি অখিলেশকে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢুকতে অনুমতি দেয়নি। তাদের আশঙ্কা অখিলেশ এখানে এলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। আর পুলিশের কাজই হল আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা। অন্যদিকে, অখিলেশকে বিমানবন্দরে আটকানোর প্রতিবাদে এদিন বিধানসভায় সরব হন সমাজবাদী পার্টির বিধায়করা।
জোটসঙ্গী মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি বলেছে, এই ঘটনায় প্রমাণ হয়, যোগী সরকার একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। মায়াবতী নিজের টুইটে লেখেন, সপা-বসপা জোট হওয়ার পরে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার কি এতটাই ভয় পেয়েছে যে, তাদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে? মমতার কথা মতো বিরোধীরা সকলে মিলিত ভাবেই এর প্রতিবাদ করবে বলে জানা গেছে। মনে করা হচ্ছে, আগামীকাল দিল্লীতে বিজেপি বিরোধী ধর্নাতেও মমতার নেতৃত্বে এই ঘটনার বিরোধীতায় সরব হতে পারেন দেশের বিরোধী নেতারা।