বাংলা গ্রাম ও শহরের সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নে মা-মাটি-মানুষের সরকারের গত সাত বছরের যাবতীয় কর্মযজ্ঞের মধ্যে কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো বাছাই করা প্রকল্পগুলি নিয়ে তৈরি হল ‘ভিশন-২১’। ক্ষমতায় আসার আগে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্যবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা বাস্তবায়নের সাফল্য কাহিনী শোনাবে এই ‘ভিশন-২১’। অর্থাৎ শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাফল্য কাহিনীই নয়, তার সঙ্গে রয়েছে পরিকাঠামো উন্নয়নের বিবরণও।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সাফল্যের মধ্যে থেকে ২১টি কাজকে সামনে রেখেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে লড়তে নামছে ‘টিম মমতা’। সদ্যসমাপ্ত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে বাংলার সেই সাফল্যের গাঁথাই দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের সামিটে যে ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ২৮৮.৩৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাফল্যের ওই ২১ ফিরিস্তি যে অনেকটাই কাজে লেগেছে, তা মানছেন ওয়াকিবহাল মহলও।
কী কী রয়েছে সেই সাফল্য গাঁথায়? ক্ষমতায় আসার আগে ২০১০-১১ সালে পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ যা ছিল, তা বেড়েছে চারগুণেরও বেশি। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬৮৪৫ কোটি টাকা। গত ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮,৫৬১ কোটিতে। গ্রাম ও শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে যেখানে আগামী আর্থিক বছরের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১.৪১ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছে মোদী সরকার, সেখানে বরাদ্দ বাড়িয়েছে মমতার সরকার। পানীয় জল, পরিবহণ, পূর্ত দফতরের সড়ক নির্মাণ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, বিদ্যুৎ, নগরোন্নয়ন ও পুরসভার পরিষেবা এবং আবাসন, এই সব মিলিয়ে যা পরিকাঠামো উন্নয়ন বলে চিহ্নিত, সেই খাতে এবার রাজ্য সরকার বরাদ্দ বাড়িয়েছে ১৩.৪৮ শতাংশ।
এরই পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নের পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩.২৫ শতাংশ। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র চলতি আর্থিক বছরে গ্রাম ও শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থাৎ রাস্তা, সেতু, বাঁধ, সেচ খাল, পানীয় জলের সংস্থান সহ আরও অনেক কিছু কাজে রাজ্য সরকার ৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। সাফল্যের ২১টি কাজের মধ্যে রয়েছে শিল্পস্থাপনে ‘এক জানালা নীতি’ও। বিদ্যুৎ, পানীয় জল, দমকলের ছাড়পত্র সহ প্রয়োজনীয় সব অনুমোদন মিলছে এক জায়গা থেকেই। সিংহভাগ ক্ষেত্রে তাও আবার অনলাইনেই। এগুলির অন্যতম, বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত দেশের প্রথম গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর অন্ডাল এবং শিল্প ও পরিকাঠামো গঠনে প্রয়োজনীয় জমির সংস্থানে ‘ল্যান্ড পারচেজ পলিসি’।
এই সারিতেই রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটন, ধর্মীয় স্থান এমনকী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রকে ঘিরে আটটি উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের বিষয়টিও। ২০১৩ সালে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল এই পর্ব। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বক্রেশ্বর, মুকুটমণিপুর, তারকেশ্বরের মতো একাধিক জায়গায় সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য গঠিত হয় উন্নয়ন পর্ষদ। ২১টির তালিকায় রয়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়ক নির্মাণে গোটা দেশে রাজ্যের এক নম্বর আসনে বসার কাহিনীও। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় গত সাড়ে সাত বছরে মোট ২৬ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি ও সংস্কারের কাজ।
এর পাশাপাশি রয়েছে রাজ্যে নতুন করে ১.৭১ লাখ একর জমিকে সেচসেবিত করার বিবরণও। আছে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আসা ৩৪ লক্ষ গরিব মানুষের কথা। রাজ্যে নতুন হাসপাতাল তৈরি এবং তাতে আরও ৭৯ হাজার নতুন শয্যা সংযোজনের বিষয়টিও রয়েছে। তালিকায় আছে সবার ঘরে আলো প্রকল্পে ১০০ শতাংশ গৃহে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার বিবরণও। তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নের যে ফিরিস্তি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হবে, অনেক ক্ষেত্রে তার বৃদ্ধির পরিমাণ জাতীয় নিরিখের থেকে অনেক বেশি। বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা আর বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ভিশন-২১কেই তাঁদের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মনে করছে মমতার দল।