আজ সরস্বতী পুজো৷ স্কুল, কলেজ, বাড়ি সর্বত্রই চলছে বাগদেবীর আরাধনা৷ পঞ্জিকা অনুযায়ী গতকাল থেকেই পুজোর সময় শুরু হয়ে গেছে৷ বেশ কিছু জায়গায় গতকালই দেবীর পুজো সম্পন্ন হয়েছে৷
হিন্দু শাস্ত্র মতে সরস্বতী হলেন জ্ঞান, বিদ্যা, সঙ্গীত এবং শিল্পকলার দেবী। তাঁর পুজো হয় মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। তাই তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী তিথি নামেও পরিচিত। এই দিন হিন্দু পরিবারে শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন এবং পিতৃতর্পণের প্রথাও রয়েছে৷
সরস্বতীকে নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। যেমন দেবীভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, সরস্বতী উৎপন্ন হয়েছেন কৃষ্ণের জিহ্বাগ্র থেকে। ব্রহ্মা প্রথম তাঁকে পুজো করেন। পৃথিবীতে তাঁর পুজোর প্রবর্তন করেন শ্রীকৃষ্ণ। গঙ্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী ছিলেন নারায়ণের তিন পত্নী। কথিত আছে, একবার গঙ্গা ও নারায়ণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসলে তিন দেবীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। তাঁরা একে অপরকে অভিশাপ দেন। গঙ্গার অভিশাপে সরস্বতী নদীতে পরিণত হন। পরে নারায়ণ বিধান দেন, সরস্বতী হবেন এক অংশে নদী, এক অংশে ব্রহ্মার পত্নী এবং এক অংশে তাঁর সঙ্গিনী। আর কলিযুগের পাঁচহাজার বছর পর তিন দেবীরই শাপমোচন হবে।
শোনা যায়, অসুরদ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে হত্যা করার সময় দেবী দুর্গার শরীর থেকে যে কৌশিকী দেবীর উৎপত্তি হয়েছিল, তাঁর অপর নাম সরস্বতী। শুক্ল যজুর্বেদ অনুসারে, একবার ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে গেলে তিনি মেষ রূপ ধারণ করেন। তখন ইন্দ্রের চিকিৎসার ভার ছিল অশ্বিনীদ্বয়ের উপর। আর তাঁর সেবার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ায় ইন্দ্র তাঁকে মেষটি দান করেন।
দেবী সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে৷ সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতী এই ত্রিদেবীর অন্যতম হলেন তিনি৷ ধ্যানমন্ত্রে তাঁকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা, শ্বেতপদ্মে আসীন, মুক্তোর হারে ভূষিতা, বীণাপুস্তকধারী এক দিব্য নারীমূর্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি দ্বিভুজা, তাঁর বাহন রাজহংস। সরস্বতীর ধ্যান বা পদ্মপুরাণে উল্লেখিত সরস্বতীস্তোত্রমে উল্লেখ না থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গায় চতুর্ভুজা দেবীর পুজো হয়। সেখানে দেবীর বাহন ময়ূর। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। তবে, পূর্ব ভারতে দেবী প্রচলিত রূপেই পূজিত হন। বৌদ্ধ ও জৈনরাও সরস্বতী পুজো করেন।