কর্ণাটকের কুর্সি নিয়ে চলা রাজনৈতিক যাত্রাপালায় ইতি পড়েনি এখনও। এবার এই ডামাডোলের বাজারেই এক ‘অডিও বোমা’ নিক্ষেপ করলেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট পেশের ঠিক ঘণ্টা খানেক আগে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই একটি অডিও ক্লিপিংস শুনিয়ে কুমারস্বামী অভিযোগ করেন, জেডিএস-কংগ্রেসের জোট সরকারকে ভেঙে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। এই অডিও ক্লিপিংসই তার বড় প্রমাণ। আবার আজ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালাও অভিযোগ করেন যে, রাজ্য কংগ্রেসকে ভাঙতে চেয়ে বিধায়কদের ১০ কোটি ঘুষও দিতে চেয়েছে বিজেপি।
এখানেই না থেমে কুমারস্বামী অভিযোগ করেন, বিধানসভার অধ্যক্ষকেও টাকার বিনিময়ে বিজেপি বগলদাবা করতে চেয়েছিল। যা শুনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি বিএস ইয়েদুরাপ্পার প্রতিক্রিয়া, অডিও ক্লিপিংসটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং সাজানো। আর অধ্যক্ষের সঙ্গে আমার অনৈতিক যোগাযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনৈতিক জীবন ছেড়ে বাণপ্রস্থে চলে যাব। তবে কুমারস্বামীর এই ‘অডিও বোমা’ নিয়ে বিজেপি-জেডিএসের চাপানউতোরের মধ্যেও সবার নজর ছিল কংগ্রেসের বিধান পরিষদীয় দলের বৈঠকের দিকে। বিশেষ করে রাজনীতির কারবারিদের কৌতূহল ছিল পূর্ব ঘোষিত এই বৈঠকে কংগ্রেস নেতৃত্ব বিদ্রোহী চার বিধায়কের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে?
গতকাল বাজেট অধিবেশনের ঠিক আগেই বিধান পরিষদীয় দলের বৈঠকে বসে কংগ্রেস। সেখানে ওই চার বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের বিধান পরিষদীয় নেতা সিদ্ধারামাইয়া। তিনি বলেছেন, দলের চার বিধায়ক রমেশ জারখিয়োলি, উমেশ যাদব, মহেশ কুমাথালি এবং বি নাগেন্দ্রনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে দল। বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের শাস্তির বিষয়ে আর্জি জানানো হবে।
তবে বিধান পরিষদীয় দলের বৈঠকে কংগ্রেসের বিদ্রোহী চার বিধায়ক ছাড়া গরহাজির ছিলেন বিধায়ক জে এন গণেশ, রোশন বৈগ এবং বি সি পাতিল। তা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। গণেশ, রোশনরা কি তা হলে বিদ্রোহীদের তালিকায় নাম তুললেন? যদিও সিদ্ধারামাইয়ার দাবি, গণেশের ‘খোঁজ’ এখনও পাওয়া যায়নি। আর রোশন ও পাতিল দু’জনেই দলের কাছ থেকে বৈঠকে হাজির না হওয়ার আগাম অনুমতি নিয়ে রেখেছিলেন।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কর্ণাটকে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বিজেপির বিরুদ্ধে জোট সরকার ভাঙার অভিযোগ তুলেছে জেডিএস এবং কংগ্রেস। এর মাঝেই এদিন সরকার ভাঙার খেলায় বিজেপির সরাসরি যোগাযোগ প্রমাণ করতে ‘অডিও বোমা’কে সামনে আনেন কুমারস্বামী। সাংবাদিক বৈঠকে সেটি পেশ করে তিনি বলেছেন, বিজেপির আসল মুখ লুকিয়ে রয়েছে এই অডিও ক্লিপিংসে। এখানে ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে জেডিএস বিধায়ক নাগানাগৌড়ার ছেলে শরণ গৌড়ার টেলিফোনে কথাবার্তা রেকর্ড করা রয়েছে।
কুমারস্বামীর অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে জেডিএসের বিধায়ক কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি শীর্ষনেতা। সেই সঙ্গে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। তার প্রমাণ রয়েছে এই অডিও ক্লিপিংসে। আর এ সব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর মদতে। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া রাজ্য বিজেপি এভাবে সরকার ভাঙার খেলায় নামার সাহস পেত না। এরই পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই অডিও ক্লিপিংস তিনি তুলে দেবেন বলেও জানিয়েছেন কুমারস্বামী। তাঁর আরও অভিযোগ, শুধু বিধায়কদের নয়, বিধানসভার অধ্যক্ষকেও সরকার ভাঙার খেলায় শামিল হতে ৫০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বিজেপির তরফে।