রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই এই অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। সজাগ সংবাদমাধ্যমের একাংশও। শুক্রবার সকালে সেই তদন্তমূলক সাংবাদিকতার মাধ্যমেই ‘দ্য হিন্দু’ কাগজের একদা সম্পাদক এন রাম একটি প্রতিবেদনে উস্কে দিয়েছেন নতুন বিতর্ক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি নোট প্রকাশ করে দিয়ে রাম দেখিয়েছেন, রাফাল নিয়ে দাসো এভিয়েশনের সঙ্গে দরকষাকষিতে বিলক্ষণ জড়িত ছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবলায়। যা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের তীব্র আপত্তি ছিল।
গতকাল সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এন রামের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, ‘কঠোর শব্দ প্রয়োগ করা পছব্দ করি না। কিন্তু সত্যিটা না বলেও থাকতে পারছি না। দেশকে আমার জানানো কর্তব্য যে প্রধানমন্ত্রী চোর। রাফাল দুর্নীতিতে উনি সরাসরি দোষী।’ অন্যদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় কংগ্রেস সভাপতির ভগ্নীপতি তথা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট বঢ়ড়াকে জেরা করছে ইডি। আবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পু চিদম্বরমের ছেলে কার্তিকে আইএনএক্স দুর্নীতিতে তলব করেছে ইডি। এ প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘সরকার যার বিরুদ্ধে ইচ্ছে আইন প্রয়োগ করতে পারে। তাঁর রবার্ট ও কার্তি যাঁকে ইচ্ছে ডেকে পাঠাতে পারে। তবে সরকারকেও দুর্নীতি নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।’
গতকালও রাহুল এই অভিযোগ করেছেন যে ‘বন্ধু’ অনিল আম্বানিকে রাফাল বিমানের যন্ত্রাংশ তৈরির বরাত পাইয়ে দিয়েছেন মোদী। ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওলাঁদই তা কবুল করেছেন। তিনিই বলেছেন, অনিল আম্বানির নাম সুপারিশ করেছিলেন খোদ মোদীই। উল্লেখ্য, মোদীর আমলের নতুন রাফাল চুক্তির সঙ্গে আগের চুক্তির মিল যৎসমান্য। ২০১৫-র এপ্রিলে প্যারিসে গিয়ে নতুন চুক্তির ঘোষণা করে এসেছিলেন মোদী। পরের বছর ২০১৬-র সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হয়ে দিল্লীতে এসে চুক্তির মউ স্বাক্ষর করেন ওলাঁদ। পাকাপাকি চুক্তি হয় ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিসাররা তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিক্করকে যএ নোট পাঠিয়েছিলেন, সেটিই প্রকাশ করেন ‘দ্য হিন্দু’। ওই নোটে কঠোর ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘সুতরাং এটা স্পষ্ট, যে সমান্তরাল দরকষাকষি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় চালাচ্ছে, তাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং মন্ত্রকের দরকষাকষি সংক্রান্ত টিমের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়কে আমরা অনুরোধ করতে পারি যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের টিম ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কোনও অফিসার যেন ফরাসি সরকারের সঙ্গে কোনও সমান্তরাল আলোচনা না চালায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপর যদি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের আস্থা না থাকে, তা হলে নতুন করে দরকষাকষি শুরু করতেই পারে।’ সন্দেহ নেই, লোকসভা ভোটের আগে এই নোট ফাঁস হয়ে যাওয়া মানে জাতীয় রাজনীতিতে বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়া।