দুজনের পদবিই ওয়ানি। দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে গুলিযুদ্ধে। এবং কাশ্মীরের মাটিতেই। কিন্তু সন্ত্রাসবাদী বুরহান ওয়ানিকে নিয়ে গত তিন বছরে দেশে যত চর্চা হয়েছে, নাজির আহমেদ ওয়ানিকে নিয়ে তার সিকি ভাগ চর্চাও হয়নি। খবরের শিরোনামে এর আগে কখনও উঠেই আসেনি তাঁর নাম। তিনি মরণোত্তর অশোক চক্র না পেলে হয়তে কোনও খবরই প্রকাশিত হত না তাঁকে নিয়ে।
এখন প্রশ্ন একটাই কে এই নাজির, যিনি দেশের সর্বোচ্চ শান্তিকালীন সামরিক সম্মান ‘অশোক চক্র’ পেলেন? নাজিরও আসলে প্রথম জীবনে জঙ্গীই ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি যোগ দেন জঙ্গী সংগঠনে। ছিলেন ইখনওয়ান-এ-মুলক সংগঠনের এক সক্রিয় জঙ্গি। পরে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির দ্বিচারিতা, দুর্নীতি এবং অত্যাচারের মানসিকতা দেখে হাতিয়ার ফেলে ২০১৪ সালে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছিলেন।
তাঁর কথা শুনে তাঁকে লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ এবং শারীরিক কসরত দেখানোর সামান্য সুযোগ দিয়েছিল সেনাবাহিনী। পরীক্ষায় পাশ করতেই নাজিরকে দেওয়া হয় চাকরির প্রস্তাব। যোগ দিয়েছিলেন দেশের সেনাবাহিনীতে। ভারতীয় সেনার ১৬২ নম্বর টেরিটোরিয়াল ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন তিনি। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরই তাঁর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিল লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিন। সেটাকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন, কাশ্মীরের মানুষের স্বার্থরক্ষা করতে পারবে ধর্মনিরপেক্ষ বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতই।
প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র সমেত হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-ই-তৈবার ৬ জঙ্গী আস্তানা গেড়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর পেয়ে, গত বছর ২৫ নভেম্বর ৩৪ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানদের সঙ্গে অনন্তনাগের বাতাগুন্দ গ্রামে অভিযানে যান নাজির। সেখানে বহুক্ষণ ধরে গুলি বিনিময় হয় জঙ্গী ও জওয়ানদের মধ্যে। নাজিরের গুলিতে নিহত হয় এক জঙ্গী। গুলি লেগেছিল নাজিরের পেটে, হাতেও। কিন্তু জঙ্গীরা পালানোর চেষ্টা করলে, সেই অবস্থাতেই রুখে দাঁড়ান তিনি। মৃত্যু হয় ওই জঙ্গীর। অন্যদিকে গুরুতর জখম অবস্থায় নাজিরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর।
অসীম সাহসিকতার জন্য এর আগে দু’-দু’টি সেনা মেডেল পেয়েছিলেন ল্যান্সনায়েক নাজির। মৃত্যুর পর এবার তিনি পেতে চলেছেন দেশের সর্বোচ্চ শান্তিকালীন সামরিক সম্মান অশোক চক্র। শনিবার সাধারণতন্ত্র দিবসে কাশ্মীরের সেই প্রাক্তন জঙ্গী, সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক নাজির আহমেদ ওয়ানিকে মরণোত্তর অশোক চক্র সম্মানে সম্মানিত করা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন।
রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘আদর্শ সৈনিকের সব গুণ ছিল ল্যান্সনায়েক নাজির আহমেদ ওয়ানির মধ্যে। চ্যালেঞ্জের সামনে সবসময় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মনোবল হারাননি। বরং কর্তব্যের খাতিরে একাধিকবার নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।’