নিজেকে গান্ধীভক্ত বলে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই দেশ চালানোর কথা বলেন তিনি। অথচ গান্ধীর জন্মভূমি এবং মোদী-শাহের রাজনৈতিক ভূমি গুজরাতেই সবচেয়ে বেশী ব্রাত্য এবং প্রত্যাখ্যাত মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধী। এমনই মনে করেন গান্ধীর জীবনীকার এবং ইতিহাস রামচন্দ্র গুহ। তাঁর আক্ষেপ, ‘গাঁধী এখন গুজরাতেই সব থেকে প্রত্যাখ্যাত! নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের গুজরাত গাঁধীর সম্প্রীতি, পরিবেশ-সচেতনতা-শালীনতা – সব কিছু থেকেই দূরে সরে যাচ্ছে’।
ভিক্টোরিয়ার বাগানে সাহিত্য উৎসবের আসরে ‘গান্ধী ইন বেঙ্গল’ আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল ও গান্ধীজির পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধীর লেখক রামচন্দ্র গুহ। রামচন্দ্র মনে করালেন আজাদ হিন্দ ফৌজের গাঁধী ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেডের কথা। গাঁধীর ‘মহাত্মা’ ও ‘জাতির জনক’ অভিধা দু’টিও বাংলার অবদান। যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্রের কাছ থেকেই পাওয়া।
গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর কথায়, ‘পশ্চিমে ডান্ডির পরে নোয়াখালি-অভিযানই গান্ধীকে গান্ধী করেছে। বাংলার কাছে গান্ধী ঋণ অপরিশোধ্য। গুজরাত গান্ধীর জন্মভূমি ঠিকই, কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে গান্ধীর গল্পটা বলাই যাবে না! আততায়ীর গুলিতে লুটিয়ে পড়ার পরে গান্ধী মাথা রেখেছিলেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া, বঙ্গকন্যা আভা চট্টোপাধ্যায়ের কোলে। গোপালকৃষ্ণের মতে, ‘এতে আছে এক প্রতীকী ব্যঞ্জনা। বিবেকানন্দ-অরবিন্দ-রবীন্দ্রনাথে মুগ্ধ গান্ধীকে শেষ মুহূর্তেও আক্ষরিক অর্থেই লালন করেছে বাংলা’।
কলকাতা, দিল্লী-সহ উপমহাদেশের বৃহত্তর পটভূমিতে গান্ধীর ভূমিকা দেশ ভাগ-পরবর্তী হিংসা ঠেকাতে অনেকটাই সফল বলে রামচন্দ্রের মত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নোয়াখালিতে একলা গান্ধীর সহচর নিরঞ্জন সিংহ গিল, যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গী ছিলেন। গাঁধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ বললেন, ‘দেশভাগ ঠেকাতে না-পারলেও তার বিষের ঝাঁঝ অনেকটা কমাতে পেরেছিলেন গান্ধী। নিজের ভিতরে কিছুটা সুভাষ, কিছুটা তাঁর গুরুদেব (রবীন্দ্রনাথ)-কেও বহন করছিলেন।’
ইতিহাসবিদদের মতে, গাঁধী নিখুঁত, ভ্রান্তিহীন ছিলেন না কখনও। তবে আত্মসমালোচনা, আত্মসমীক্ষায় ছিলেন দ্বিধাহীন। বাংলার প্রতি এই অকপট মুগ্ধতা সেই গান্ধী-সংস্কৃতিরই ছাপ রেখে গেল এ দিনের সভায়।