৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে পদ্মের। শরিকদের গলাতেও এখন বিরোধীতার সুর। কিন্তু তারপরও নিজেদের গো-রাজনীতি থেকে সরেনি বিজেপি। বরং আরও এক ধাপ এগিয়েই বেওয়ারিশ গরুদের জন্য এই সরকারি আশ্রয়স্থল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। তার বাস্তবায়নেই এবার রাজধানী দিল্লীর লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় অবস্থিত বেসরকারি সংস্থাগুলিকে এবার উদ্যোগ নিতে হবে গো-শালা নির্মাণে৷ যা নিয়ে আবারও বিতর্কের শিরোনামে যোগী সরকার।
জানা গেছে, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিসিবিলিটি বা সিএসআর প্রকল্পের অধীনে নয়ডাতে অবস্থিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা গো-শালা নির্মাণে যাতে এগিয়ে আসে, তা দেখার জন্য নির্দেশ জারি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার জেলাশাসক বি এন সিংয়ের৷
প্রাথমিক ভাবে নয়ডা দিয়ে শুরু করার পরে এই সিএসআর প্রকল্পে গো-শালা নির্মাণের বিষয়টি রাজ্যের অন্যত্রও শুরু করা হবে, এমন পরিকল্পনাই রয়েছে যোগী প্রশাসনের৷ সূত্রের খবর, সিএসআর প্রকল্পে গো-শালা নির্মাণের উদ্যোগের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ সরকার চিন্তা ভাবনা করছে দ্রুত ‘গো-কল্যাণ সেস’ চালু করার, যেখানে রাজ্যের সর্বত্র অতিরিক্ত ০.৫ শতাংশ আবগারি শুল্ক চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে৷
নয়ডার জেলাশাসকের দফতরে এখন সরকারি নির্দেশ পালনে প্রশাসনিক ব্যস্ততা যথেষ্টই৷ জেলাশাসক বিএন সিং নিজে অন্যত্র ব্যস্ত থাকলেও তাঁরই নির্দেশে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছেন যোগী প্রশাসনের আধিকারিকরা৷ সরকারি উদ্যোগে গো-শালা নির্মাণে উৎসাহ বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টার কসুর রাখছেন না কেউই৷
কোনও বেসরকারি সংস্থা যদি রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে? গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলাশাসকের দফতরে উপস্থিত রাজ্যের এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘এই উদ্যোগকে বাধ্যতামূলক না হলেও, আমরা আশা রাখছি সরকারের তরফে যে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে তার সঙ্গে সহযোগিতা করবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলি৷ কারণ এখানকার সব বড় বেসরকারি সংস্থাতেই রয়েছে সিএসআর স্কিম, যার অধীনে বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে ওই সংস্থাগুলি৷ গো-শালা নির্মাণকে একটি বড় সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে দেখলে ক্ষতি কী?’
উল্লেখ্য, সিএসআর প্রকল্পে গো-শালা নির্মাণই যে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সর্বশেষ উদ্যোগ হতে চলেছে, তা একেবারেই নয়৷ গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলাশাসকের কার্যালয়েই জানা গেল যে, আগামী আর্থিক বছরের শুরু থেকেই রাজ্যের সর্বত্র শুরু করা হতে পারে গো-কল্যাণ সেস, যেখানে অতিরিক্ত ০.৫ শতাংশ আবগারি শুল্ক লাগু করা হতে পারে৷ সিএসআর প্রকল্প ঐচ্ছিক হলেও এই গো-কল্যাণ সেস নামের আবগারি শুল্ক কিন্তু প্রয়োগ করা হবে বাধ্যতামূলক কর হিসেবেই৷
তবে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। তাদের সকলেরই এক অভিযোগ, মানুষের দুর্দশা নয়, বেওয়ারিশ গোমাতাদের ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়েই বেশি ভাবিত যোগী সরকার। বিজেপির কাছে মানুষের প্রাণের চেয়েও গরুর প্রাণের দাম বেশি।