কলকাতা: প্রায় ৭ বছর আগে কলকাতায় চালু হয় ইলেকট্রিক বাস। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, যানবাহন যাতে পরিবেশবান্ধব হয়। তবে এই পরিবেশের ক্ষতি না করে যানবাহন চালানোর স্বপ্নের বাস্তব অভিজ্ঞতা ততটা ভাল হল না। তাই এবার রাজ্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চলেছে। ই-বাস আর নতুন করে কিনবে না রাজ্য তবে পরিবেশ দূষণ যাতে না হয় সে কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নবান্ন। সম্প্রতি নবান্নে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা যাচ্ছে, পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে শুরু হলেও প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ইলেকট্রিক বাসের অধ্যায়ে আপাতত ইতি টানছে রাজ্য। তার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী এবং টেকসই পদ্ধতির সন্ধানে এ বার সিএনজির পথে হাঁটছে নবান্ন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের অধীনে বিভিন্ন সরকারি ডিপোয় রয়েছে ৮০টি ইলেকট্রিক বাস। তবে পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে এবার বিকল্প হিসেবে সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচরাল গ্যাস) চালিত বাসের দিকে ঝুঁকছে রাজ্য। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ২০০টি সিএনজি চালিত এসি বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রতিটি সিএনজি বাসের দাম আনুমানিক ৪২ থেকে ৪৪ লক্ষ টাকা। এই বাসগুলি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, দীর্ঘস্থায়ীও। ব্যাটারি সমস্যার ঝামেলা ছাড়াই অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত রাস্তায় পরিষেবা দিতে পারবে এই বাসগুলি। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে আসন্ন দুর্গোৎসবের আগেই শহরের রাস্তায় নামবে ৩০–৪০টি নতুন সিএনজি বাস।
উল্লেখ্য, ই-বাসগুলি ৯ মিটার ও ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের, এবং প্রতিটির দাম ৯৫ লক্ষ থেকে ১.৩০ কোটি টাকা। বাস নির্মাণকারী সংস্থার দাবি ছিল, সম্পূর্ণ চার্জে বাসগুলি ১০০–১১০ কিমি পর্যন্ত চলতে পারে এবং অন্তত ১২ বছর যাত্রী পরিবহণে সক্ষম। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়েই ব্যাটারির ক্ষমতা কমে গিয়ে মাইলেজ নেমে এসেছে ৭০–৮০ কিমিতে। এর সঙ্গে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং যন্ত্রাংশের অভাবজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়া। প্রতিটি ই-বাসে রয়েছে তিনটি করে ব্যাটারি, যার এক-একটির দাম প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। ব্যাটারি দুর্বল হলে বাস কার্যত অচল হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে হাতেগোনা কয়েকটি সংস্থা, যার ফলে বাজারে একচেটিয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি নবান্নে পরিবহণ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হয়।