আহমেদাবাদ : ভারতের বিমানযাত্রার ইতিহাসে কালো দিন হয়ে রইল ২০২৫ এর ১২ জুন। বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছু মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ যাত্রীবাহী বিমান।(Air Crash) মোট ২৪৪ জনকে নিয়ে আহমেদাবাদ থেকে ইংল্যান্ডেরগামী বিমান আছড়ে পড়েছিল বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৬৫ জনের! কেন ঘটল এমনটা? দায়ী কে বা কারা ? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
Read More: এখনও মেলেনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’! জানাল এয়ার ইন্ডিয়া
এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এয়ারবাস উড়ানের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। ২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরুর পর এ যাবৎ এই বিমানটি কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। তাহলে এবার কেন এই অভিশপ্ত ব্যতিক্রম? এ বিষয়ে প্রকাশ্যে আসছে নানা মত। কেউ বলছেন, বিমানের ইঞ্জিনে যান্ত্রিক গোলযোগ ছিল। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের ধারণা, ওড়ার পর যে উচ্চতায় বিমানটি ওড়ার কথা ছিল সেই উচ্চতায় সেটি আরোহণ করতে পারেনি। কারও কারও ধারণা, বিমানটি পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেতে পারে। আবার এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে অন্তর্ঘাতের তত্ত্বও মাথাচাড়া দিয়েছে।
তবে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসাবে যা যা উঠে আসছে, তার পিছনে গাফিলতির অভিযোগ পরিষ্কার। বলা হচ্ছে, ইঞ্জিন ফেলিওর বা গ্রাস্ট রিডাকশনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।(Air Crash) আর এই ড্রিমলাইনার বিমানের প্রযুক্তি সেই ২০১৭ সাল থেকে লাগাতার সতর্ক করে গিয়েছেন ওই সংস্থারই তৎকালীন কর্মী জন বার্নেট। পরে বার্নেটের রহস্যমৃত্যু হয়। বার্নেটের সেই সতর্কবার্তায় কেউ আমল দেননি। তাছাড়া বোয়িং সংস্থার বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়াটা কার্যত নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন ওই সংস্থার বিমান ব্যবহার করে চলেছে কেন এয়ার ইন্ডিয়া? কেন বিকল্প ভাবা হয়নি? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

পাশাপাশি অভিযোগ উঠছে, ওই বিমানটিতে রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত গাফিলতি রয়ে গিয়েছে। যদি বিমানের পূর্ববর্তী সার্ভিসিংয়ে কোনও যান্ত্রিক সমস্যা অগ্রাহ্য করা হয় (গিয়ার অ্যাকচু্যুরেটর লিক, হাইড্রোলিক ফেলিওর ইত্যাদি), তাহলে বিমানটি ওড়ার সময় সমস্যা তৈরি করতে পারে তা। একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই বিমানটিই আগেরদিন প্যারিস থেকে দিল্লি এসেছে।বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি থেকে সেটি আহমেদাবাদ আসে। দুপুরে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনে যাত্রার কথা ছিল। একটি বিমানকে বিশ্রাম না দিয়ে পরপর ব্যবহারে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের সময় পাওয়া যাচ্ছে কি না, সে নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1933466562587181282
আবার কেউ কেউ বলছেন, এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে ‘পাইলট এরর’ থাকতে পারে। আবার পাইলটদের একাংশ বলছেন, বিমানসংস্থাগুলি পাইলটদের উপর যে পরিমাণ কাজের চাপ দেয়, সেই চাপ সামলাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়াটা স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রেই পাইলট বা ক্রু’দের যে ডিউটি রস্টার দেওয়া হয়, তা কার্যত অমানবিক। টানা কাজ, দুই শিফটের মধ্যে বিশ্রামের সময়ের অভাব, এসব নিয়ে অতীতে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন বিমান সংস্থার কর্মীরা।
সবশেষে উঠে আসছে নাশকতার তত্ত্ব। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল তুরস্কের একটি সংস্থা। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর সেলেবি অ্যাভিয়েশনের লাইসেন্স বাতিল করে ভারত। তার সঙ্গে কী এর কোনও যোগ থাকতে পারে? কেউ কেউ সেই সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন। আর এর পিছনে অন্য কোনও নাশকতা যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আরও উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সেক্ষেত্রে সারা দেশের আকাশপথের নিরাপত্তাই সংশয়ের মুখে পড়তে পারে।