প্রতিবেদন : কাশ্মীর মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। ফেসবুকে শেষ পোস্ট ছিল, ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। কাশ্মীর প্যারাডাইস ফাউন্ড।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আইবি অফিসার মণীশরঞ্জন মিশ্র তখনও জানতেন না, মৃত্যু অপেক্ষা করছে তার জন্য।
কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বৈশরণ উপত্যকায় দুপুর গড়িয়ে তখন বিকাল। রিসর্টের বাইরে হর্স রাইডিং করছিলেন মণীশরঞ্জন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী জয়া মিশ্র। ছিল ৬ বছরের মেয়ে। তার খেয়াল রাখছিল ১২ বছরের ছেলে। আর সেই সময়ই অতর্কিত জঙ্গি হামলা।
পহেলগাঁও হাসপাতালে ভর্তি থাকা জয়া দেবী বলেন, “একটা লোক মণীশকে যেন ইশারায় কি বলল। তখনও একে ৪৭ টা আমার নজরে পড়েনি। তারপর ওই লোকটা আমাদের সরে যেতে বলে একের পর এক গুলিতে মণীশকে ঝাঁঝরা করে দিল।” কথা বলতে বলতে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তিনি।
মণীশরঞ্জনের বাড়ি পুরুলিয়ার ঝালদার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ওল্ড বাঘমুণ্ডি রোডে। কর্মসূত্রে তিনি থাকেন হায়দরাবাদে। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখ মণীশের স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে রওনা দেন। বেনারস, অযোধ্যা হয়ে ১৬ এপ্রিল হরিদ্বার থেকে সপরিবারে কাশ্মীরের পহেলগাঁও পৌঁছন। কয়েকদিন সেখানেই ছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার তাঁদের জম্মুর কাটরা যাওয়ার কথা। সেখানে মিলিত হতেন বাবা-মা আর দুই ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে। তারপর তাঁদের বৈষ্ণোদেবী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মা-বাবা, দুই ভাইয়ের পরিবারকে নিয়ে আর হল না সেই মন্দির দর্শন।
মণীশের ভাই বিনীত মিশ্র বলেন, “মঙ্গলবার বিকালে ওই খারাপ খবরটা পাই। বউদি ফোন করে বলেন, মণীশকো গুলি মার দিয়া। হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছিল আমার। তারপরেই আমরা ডালটনগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরে আসি। জানি না ওখানে গেলে বাবা-মার কী হত?” কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মণীশের বাবা-মা। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো মণীশের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ান। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মণীশরঞ্জনের বাড়িতে ফোন করে ভাই বিনীতের সঙ্গে কথা বলেন। পাশে থাকার আশ্বাস দেন তাঁদের।