নয়াদিল্লি : ছিল বিভিন্ন বিরুদ্ধমত ও যুক্তি। ছিল প্রশ্নের ছড়াছড়ি। তবুও দীর্ঘ বিতর্কের পর বুধবার গভীর রাতে লোকসভায় পাশ হয়ে গেল সংশোধিত ওয়াকফ বিল।(Amended Waqf Bill)বিলের পক্ষে ২৮৮ এবং বিপক্ষে ২৩২ জন সাংসদ ভোট দিলেন। ব্যবধান ৫৬। মোট ভোট পড়ল ৫২০। বুধবার লোকসভায় বিল পেশের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সরকারের অবস্থানের কথা জানান। এর পরে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫’ পেশ করেন। বিল পেশের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর অভিযোগ, জেপিসিতে ভিন্ন মত প্রকাশ করে বিরোধী সাংসদদের দেওয়া নোটগুলি উপেক্ষা করা হয়েছে বিলটিতে।
Read More: মমতার বার্তা পৌঁছে দিতে জেলায় জেলায় কর্মসূচি শুরু তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের
পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেন, মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই সংশোধিত ওয়াকফ বিল(Amended Waqf Bill)এনেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী আগে ইদের উৎসবে যোগ দিতেন। হঠাৎ কী হল জানি না। আমাদের সংবিধান কি এই শিক্ষা দেয়! যখনই বিজেপি কোনও বিল আনে, নিজেদের ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার জন্য আনে।’’ সেই ব্যর্থতার উদাহরণ প্রসঙ্গে অখিলেশ বুধবার মোদী সরকারের নোটবন্দির প্রসঙ্গও তুললেন। তাঁর দাবি, একের পর এক ব্যর্থতা দিয়ে এই বিল তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর কথায়, “বিজেপি শুধু একটি পুরনো ঘটনার কথাই ভাবে, অযোধ্যার কথা।”
ওয়াকফ বিল নিয়ে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে মেরুকরণের অভিযোগ তোলেন অসমের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। তাঁর মন্তব্য, “এই বিল সংবিধানকে অবজ্ঞা করতে চায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অপদস্থ করতে চায় এবং ভারতের সমাজকে বিভক্ত করতে চায়।” সেই সঙ্গে রিজিজুকে নিশানা করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সংসদকে বিভ্রান্ত করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।’’
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1907705421852455315?s=19
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আমি এই বিলকে একেবারেই সমর্থন করছি না। এই বিল অসাংবিধানিক। তৃণমূলের তরফে আমরা এই বিলের বিরোধিতা করছি।’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপির আনা এই বিলে মুসলমানদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। ওয়াকফ বিলের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। ‘‘ওয়াকফ সংশোধনী বিলের আড়ালে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ভাগ করতে চাইছে। যদি ওরা একতাই চায়, তা হলে বিলে কেন ভাগের চেষ্টার কথা? সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে শ্রেণিবিভাগ শাসকদলের খারাপ উদ্দেশ্যই ইঙ্গিত করে। ওয়াকফ বিল হল সরকারি মাধ্যম দিয়ে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের একটি প্রচেষ্টা। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি অযৌক্তিক। ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের মেরুদণ্ড’’, জানান তিনি।
এছাড়া বুধবার লোকসভায় সংশোধিত ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করেছে ‘একদা হিন্দুত্ববাদী’ উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাও (ইউবিটি)। উদ্ধবসেনার সাংসদ অরবিন্দ সাবন্ত ওয়াকফ বোর্ডে দুই অমুসলিম সদস্য এবং ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালে সিইও পদে আমলা নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার কি মন্দির কমিটিতে অহিন্দুদের থাকার অনুমতি দেবে? কী কারণে তারা ওয়াকফ বোর্ডের কমিটিতে অমুসলিমদের স্থান দেওয়ার চেষ্টা করছে?’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, জেপিসিতে প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে আলোচনা হয়নি।
উল্লেখ্য, ‘ইন্ডিয়া’-বহির্ভূত বিরোধী দল ‘আজাদ সমাজ পার্টি’র প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের নাগিনা কেন্দ্রের দলিত সাংসদ চন্দ্রশেখর আজাদ ওরফে রাবণও সংশোধিত ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক বিভাজনের অভিযোগ তোলেন। সরব হয়েছেন হায়দরাবাদের সাংসদ তথা ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলে সংসদে কোনও বিতর্ক ছাড়াই ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হয়েছিল। ওই সংশোধনী নিয়ে বিজেপি সাংসদের সমালোচনা প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন তুলে ওয়েইসির প্রশ্ন, ‘‘সে দিন এই সংসদে লালকৃষ্ণ আডবাণী হাজির ছিলেন। ছিলেন প্রয়াত সুষমা স্বরাজ। রাজনাথ সিংহজিও (প্রতিরক্ষামন্ত্রী) ২০১৩ সালের ওয়াকফ সংশোধনী বিল সর্বসম্মত ভাবে পাশ হওয়ার সময় সংসদে ছিলেন। আমার একটাই প্রশ্ন, আডবাণীজিরা কি সে দিন ভুল ছিলেন? কেন তাঁরা বিনা আপত্তিতে বিল পাশ হতে দিয়েছিলেন?’’ আসাদউদ্দিনের অভিযোগ, মুসলিমদের জমির অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করাই মোদী সরকারের ওয়াকফ বিলের মূল উদ্দেশ্য।