কলকাতা : শনিবার সন্ধ্যায় ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ চলাকালীন মাঠে ঢুকে পড়েন পূর্ব বর্ধমানের তরুণ ঋতুপর্ণ পাখিরা। নিজের ‘আইডল’ বিরাট কোহলির(Virat Kohli)পা জড়িয়ে ধরেন তিনি। তড়িঘড়ি তাঁকে মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপত্তাকর্মীরা। ঋতুপর্ণকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। আর সোমবার তাকে জামিন দিল কলকাতা সিজেএম আদালত। বিচারক কৌস্তুভ মুখোপাধ্যায় হাজার টাকার বন্ডে শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন তাঁকে। জামালপুরের বাসিন্দা, ১৮ বছরের ঋতুপর্ণের যদিও কোনও আফসোস নেই। নিজের ‘ঈশ্বর’কে ছুঁয়ে ফেলেছেন যে! এ দিন জামিন পেয়ে আদালত চত্বরে ঋতুপর্ণ বলেন, ‘‘কোনও আফসোস হচ্ছে না। ভগবানের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছে। আর কী চাই!’’
Read More: বিগত ৩ বছরে বেসরকারি হাসপাতালে কত রোগীর চিকিৎসা! স্বাস্থ্যসাথী সংক্রান্ত তথ্য তলব কমিশনের
ঋতুপর্ণের কথায়, “প্রণাম করতেই আমার ভগবান, বিরাট কোহলি(Virat Kohli)আমার নাম জানতে চান। আমি নাম বললাম। বিরাট আমাকে বলেন, ‘ভাই, ভাগ যা ইহাঁসে।’ সিকিউরিটিরা চলে আসার পরে বিরাট আমাকে দেখিয়ে ওঁদের বলেন, ‘একে কিছু করবেন না।’ আমি বিরাটের ভক্ত। প্রণাম করার স্বপ্ন ছিল। আবেগের বশে এ কাজ করে ফেলেছি। এখন একটু খারাপ লাগছে। এ বছর আর মাঠে যেতে পারব না। তবে সামনের বছর আবার যাব।” ভালো ক্রিকেটও খেলেন ঋতুপর্ণ। এদিন তিনি বলেন, “আমি খেলতে ভালোবাসি। আমাকেও একটু সুযোগ করে দেওয়া হোক।” শর্ত অনুযায়ী, ২০২৫-এর আইপিএল চলাকালীন ইডেনে ঢুকতে পারবেন না ঋতুপর্ণ। ইডেন-সংলগ্ন এলাকাতেও যেতে পারবেন না তিনি।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1904470928488018260?s=19
খেলা চলাকালীন অনুপ্রবেশ-সহ একাধিক অভিযোগে ঋতুপর্ণ গ্রেফতার করে ময়দান থানা। পুলিশ হেফাজত শেষে সোমবার ঋতুপর্ণকে আদালতে হাজির করা হয়। সরকারি আইনজীবী তারকনাথ মণ্ডল এবং রাধানাথ রং অভিযুক্তকে ফের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানান। বিচারক বলেন, ‘‘পুলিশ হেফাজতে নিয়ে কী করবেন? ১৯৮৩-র ক্রিকেট ম্যাচ দেখেননি? একটা করে উইকেট পড়ার পরে দর্শকেরা মাঠে ঢুকে পড়তেন।’’
সরকারি আইনজীবীরা বলেন, ‘‘এই ঘটনায় বিরাটের মনোসংযোগ ছিন্ন হয়েছে। তাঁর রান করতে অসুবিধা হয়েছে। আগামী ৩ তারিখ ফের বিরাটের খেলা রয়েছে। ধৃতের উদ্দেশ্য কী তা, জানতে হবে।’’ তাঁরা আরও বলেন, ‘‘ধৃতের কাছে এইচ ব্লকের টিকিট ছিল। তবু তিনি জি ব্লক দিয়ে ঢুকতে যাওয়ায় পুলিশ তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পরে জি ব্লকের পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ঋতুপর্ণ সেখান দিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন। ক্রিমিনাল ফোর্স অ্যাপ্লাই করেছেন। যাঁর উপরে ক্রিমিনাল ফোর্স অ্যাপ্লাই করা হয়েছে, তাঁর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।’’ বিচারক জানতে চান, বিরাট কোহলির বক্তব্য নেওয়া হয়েছে?
এরপর ঋতুপর্ণের আইনজীবী মহম্মদ শাহজাদ হোসেন এবং মহম্মদ হাসনাইন হোসেন আনসারি জামিনের আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘‘আবেগ এবং অপরাধকে এক করা উচিত নয়। বলা হচ্ছে বিরাট কোহলির অসুবিধা হয়েছে। বিরাট কোহলির বক্তব্য আছে?’’ অভিযুক্ত কী করেন, বিচারক তা জানতে চাইলে সমস্বরে আইনজীবীরা বলেন, পড়াশোনা করেন। তিনি এক জন ক্রিকেট প্রেমিক। বিচারক ঋতুপর্ণকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কী পড়ো?’’ ঋতুপর্ণ বলেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি।’’ উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পরে বিচারক বলেন, ‘‘অভিযুক্তের কাছে কোনও অস্ত্র বা আপত্তিকর জিনিস পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজত বা জেল হেফাজতে রাখার যৌক্তিকতা নেই।’’ এর পরেই ঋতুপর্ণের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
ক্রিকেট নিয়ে বরারবই উৎসাহী ঋতুপর্ণ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিরাট যাতে বড় রান পান, সে জন্য প্রতিদিন স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিতেন। গ্রেফতারের পরবর্তী অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণ বলেন, “পুলিশ যখন আমাকে ধরে নিয়ে এল, তখন আমার ভয় করেনি। জানতাম আমি আমার ভগবান কে প্রণাম করতে পেরেছি যখন, তখন আমার কিছু হবে না। কোনও পুলিশকর্মী আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। এ বার বাড়ি ফিরে আরও মন দিয়ে প্র্যাকটিস করব।”
পুত্রের গ্রেফতারির খবর পেয়েই কলকাতায় ছোটেন ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব পাখিরা। ফেরার সময়ে তিনি বলেন, “ও বাড়ি থেকে যাওয়ার সময়েও বলে গিয়েছিল বিরাট কোহলিকে ছুঁয়ে প্রণাম করবে। ভেবেছিলাম কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ও সব কিছু করতে পারবে না। কিন্তু করে ফেলবে বুঝতে পারিনি। ছোট থেকেই খেলা-পাগল।” বেলেঘাটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস করতেন ঋতুপর্ণ। এখন নতুন জায়গার খোঁজ করছেন। “বিরাট ওর কাছে ভগবানের মতো। আবেগে একটা ভুল করে ফেলেছে। কলকাতা পুলিশের কাছেও ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম। সকলে আমাদের আবেদন শুনেছেন”, জানিয়েছেন ঋতুপর্ণের মা কাকলিদেবী।