কলকাতা : দেশজুড়ে সর্বস্তরের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে মোদী সরকার যে কতটা ব্যর্থ, তা হাতেকলমে প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নবাণে রীতিমতো দিশাহারা হয়ে পড়ল কেন্দ্র। দিনের পর দিন বাংলার শ্রমিকদের প্রতি কেন্দ্রের অবহেলা এবং বঞ্চনার একের পর এক তথ্য তুলে ধরে লেবার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রের জবাব চেয়েছিলেন ঋতব্রত। আর একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেননি কেন্দ্রের শ্রমসচিব! প্রতিটি ক্ষেত্রেই বলেছেন, তিনি নাকি লিখিতভাবে জানাবেন!
ঋতব্রত অভিযোগ তুলেছেন, হলদিয়া-সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় এমন সংস্থা রয়েছে, যারা নিয়ম মেনে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে অর্থ জমা করছে না। অথচ শ্রমিকদের বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। সংস্থার তরফের অর্থের সঙ্গে সেই টাকাও জমা হচ্ছে না।হলদিয়ায় কেন্দ্রীয় সংস্থায় বেশ কিছু শ্রমিক রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁদের এবং ঠিকাকর্মীদের পিএফ দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী গত এক বছরে কেন্দ্রকে তিন বার চিঠি দিলেও একবারও উত্তর মেলেনি।
উত্তরবঙ্গের চা-বাগানেও একই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ঋতব্রত। তাঁর অভিযোগ, কোন চা-বাগানের মালিক শ্রমিকদের কত টাকা পিএফে বাকি রেখেছেন, তা রাজ্য সরকারকে জানানো হচ্ছে না। ঋতব্রতর অভিযোগ, জলপাইগুড়ি রিজিওনাল পিএফ অফিস এখন কার্যত ঘুঘু্র বাসায় রূপান্তরিত হয়েছে। কোনও তথ্যই দিচ্ছে না কেন্দ্র। তারা কেবল অসাধু মানুষদের স্বার্থে কাজ করছে। সূত্রের খবর, এই কমিটির সদস্য তথা বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গাও স্বীকার করে নিয়েছেন জলপাইগুড়ি পিএফ অফিসের ভয়াবহ দশা।
কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে অসংগঠিত শ্রমিকের তথ্য নিয়েও রয়েছে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি। লেবার সেক্রেটারির দাবি অনুযায়ী দেশে অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা ৮২ শতাংশ। অথচ কেন্দ্রের নিজস্ব পোর্টালে তা দেখানো হচ্ছে ৯০ শতাংশ। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক কাজ করছে বলে যেমন দাবি করেছে কেন্দ্র, তার সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসসভার সাংসদ। তাঁর কথায়, ২৫ শতাংশ বিড়ি শ্রমিক থাকেন মুর্শিদাবাদে। সরকারি পোর্টালের তথ্যই বলছে সে কথা। সেখানে বিড়ি হাসপাতাল আছে কেন্দ্র সরকারের। ৬৫টি শয্যা রয়েছে। ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু রয়েছেন ২জন। ৫ জন নার্স। ফার্মাসিস্ট ২ জন। তিনটি অপারেশন থিয়েটার আছে। অথচ সবকটিই অচল! কাজ করে না ল্যাবরেটরিও।
পাশাপাশি, ইএসআই হাসপাতাল নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকাকেও একহাত নিয়েছেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে দুটি বড় ইএস আই হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। একটি শিলিগুড়িতে এবং একটি হলদিয়ায়। রাজ্য সরকার হাসপাতাল দুটি চালাতে চেয়েছিল। কেন্দ্র রাজি হয়। রাজ্য চিকিৎসক এবং নার্স নিয়োগও করে হাসপাতালের জন্য। কিন্তু কেন্দ্র হস্তান্তর করছে না। এরকম চললে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। কী করছে কেন্দ্র? প্রশ্ন তোলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই মেলেনি কোনও সদুত্তর।