বছরের পর বছর কেটে গেলেও কাটেনি অন্ধকার। বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে নারীসুরক্ষা ও নারীনিরাপত্তার পরিস্থিতি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। ক্রমশ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নারীনিগ্রহ ও ধর্ষণ। এবার ফের ফুটে উঠল সেই নারকীয় প্রতিচ্ছবি। সে রাজ্যে পড়তে আসা ভিনরাজ্যের ছাত্রীদেরও সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ
যোগী প্রশাসন। নিজেদের অপদার্থতা আড়াল করতে খুনকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতেও দ্বিধা করল না পুলিশ! নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বারাণসীতে এসেছিলেন বিহারের সাসারামের ১৭ বছরের এক তরুণী। কিন্তু রহস্যজনকভাবে খুন হতে হল তাঁকে। খুনের আগে তাঁকে ধর্ষণও করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। দিনপাঁচেক আগে হস্টেলের ঘরে পাওয়া গিয়েছে তরুণীর ঝুলন্ত দেহ। সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয় হল, বাড়ির লোকেদের খবর না দিয়েই ছাত্রীর দেহ দ্রুত দাহ করে ফেলতে নির্লজ্জভাবে তৎপর হয়ে উঠল প্রশাসন। চেষ্টা করা হল দেহ লোপাটেরও!
ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই নিন্দা এবং ধিক্কারের ঝড় বইছে দুই ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে। বিরোধী দলগুলি তো বটেই, বিহারের শাসক বিজেপি ও তার বন্ধু দলগুলিও যোগীরাজ্যের এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দাবি জানিয়েছে নিরপেক্ষ তদন্তের। অথচ এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর নিন্দায় একটি বাক্যও ব্যয় করেনি সিপিএম! কতিপয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ আসলে রাম-বাম আঁতাতের বহিঃপ্রকাশ। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “বিহারের ছাত্রী মারা গেল উত্তরপ্রদেশে। আর পরিবারকে না জানিয়ে ময়না তদন্ত করে তড়িঘড়ি দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল। এখানে যারা গোপনে পোস্টমর্টেমে সই করে সব ঠিক আছে বলেও নাটক দেখাতেন, সেই বিজেপি-সিপিএমের নেতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, চিত্রপরিচালকরা এখন কী বলবেন এই ঘটনা নিয়ে? কয়েকদিন আগেই যোগীরাজ্যের সাহারানপুরে পণের দাবিতে এক গৃহবধূকে এইচআইভি ইঞ্জেকশন দিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তখনও চুপ সিপিএম। যে সিপিএম বাংলায় কথায় কথায় তিলকে তাল করে বিভ্রান্ত করে মানুষকে। অস্তিত্বরক্ষায় মরিয়া হয়ে মিথ্যাচার করে চলে লাগামহীনভাবে। যে সিপিএম শাসিত কেরলের মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের যৌনাঙ্গে ডাম্বেল ঝুলিয়ে র্যাগিং করা হয়। যোগীরাজ্যের ব্যাপারে তাদের অদ্ভুত মৌনতার নেপথ্যে যে রাম-বামের অশুভ আঁতাত তা আজ দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।”
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, প্রথমেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তবে পরিবারের জোরালো দাবির পরে অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তে বাধ্য হয় তারা। বিহারের ছাত্রীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বিহারের বিজেপির বন্ধু-নেতারা এবার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতেও সরব হয়েছেন। বিহারের সাসারামের বাসিন্দা ওই ছাত্রী নিট পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বারাণসীর একটি মহিলা হস্টেলে থাকতেন। সোমবার রাতে ১৭ বছরের পড়ুয়ার সঙ্গে বাড়িতে ফোনে কথা হয় মায়ের। এমনকী ভিডিও কলে নিজের খাবারও দেখান ওই ছাত্রী। এরপরই সকালে বিহারের বাড়িতে খবর পৌঁছায়, তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ মৃত্যুর খবরও তাঁদের জানায়নি বলে দাবি পরিবারের। স্থানীয় এক পরিচিতের থেকে খবর পেয়ে তাঁরা ছুটে আসেন। দিশাহারা হয়ে পড়েন স্বাভাবিকভাবেই। পরে তাঁরা বারাণসী পৌঁছন ও দাবি করেন তাঁদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। চাপে পড়ে খুনের অভিযোগ নিতে বাধ্য হয় বারাণসী পুলিশ। দ্রুত ময়নাতদন্ত শেষ করে দেহ সৎকারের জন্যও চাপ দেয় পুলিশ, এমনই অভিযোগ জানিয়েছে পরিবার। এরপরই এই রহস্য-মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। মোমবাতি মিছিল করে জানানো হয় ধিক্কার। সাংসদ উপেন্দ্র কুশওয়াহা যোগী প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত ও সরাসরি যোগী আদিত্যনাথের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। বিজেপির শরিক দলগুলিও ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছে যোগী প্রশাসনের উপর।