বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই নারীদের ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভরতার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করেছেন একাধিক প্রকল্পের সূচনা। রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের আর্থিক ক্ষমতায়নে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য। যার উজ্জ্বল উদাহরণ ‘সৃষ্টিশ্রী’। সদ্য নদিয়ার সৃষ্টিশ্রী মেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থার মোট ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলির উৎপাদিত সামগ্রী কিনে নেবে। ফলে তাদের ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলি কত পরিমাণ সামগ্রী কিনবে তার প্রাথমিক একটা হিসেবনিকেশ করা হয়েছে মেলাপ্রাঙ্গণেই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করতে এই প্রথম এমন উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। নদিয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ জানিয়েছেন, সৃষ্টিশ্রী মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখোমুখি বসানো হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত সামগ্রী কিনতে ইচ্ছুক এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে সেখানে ডাকা হয়। বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। জেলা প্রশাসনের তরফে সারা বছরই মহিলাদের এই গোষ্ঠীগুলির ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাতে তাঁরা তাঁদের তৈরি জিনিস বিক্রি করে লাভবান হয়ে উঠতে পারেন, সেজন্যই এই পদক্ষেপ।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতিই কৃষ্ণনগর শহরের গভর্নমেন্ট কলেজ মাঠে আয়োজিত হয় সৃষ্টিশ্রী মেলার। নদিয়ার পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও পূর্ব বর্ধমানের বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠী সেই মেলায় অংশ নেয়। প্রায় ৭০টির মতো স্টলে শতাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী তাদের সদস্যদের তৈরি সামগ্রী সাজিয়ে বসেছিল বিক্রির উদ্দেশ্যে। সেই মেলাতেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বায়ার্স-সেলার্স মিটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখোমুখি বসানো হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা বেসরকারি সংস্থাগুলির সামনে নিজেদের সামগ্রী তুলে ধরে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিরও অভিষেক ঘটে। প্রশাসন কর্তাদের কথায়, বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের সুন্দর জিনিস তৈরি করে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৩টি নামী বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ১৫টি লেটার্স অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর বাইরেও কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলাতেই কোনও কোনও বেসরকারি সংস্থার লক্ষাধিক টাকার চুক্তি হয়েছে। জামদানি শাড়ি, বেডশিট, অর্গানিক বা জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন হলুদগুঁড়ো-সহ ব্ল্যাক রাইস, গুড়, গোবিন্দভোগ চাল, চিঁড়ে, ঘি, পাটের সামগ্রী কেনার চুক্তি হয়েছে দুই তরফের মধ্যে। ডিআরডিসি-র এক কর্তা জানান, বায়ার্স-সেলার্স মিটের পাশাপাশি সৃষ্টিশ্রী মেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে প্যাকেজিং শেখানোর কর্মশালাও করা হয়েছিল। এবার এই মেলায় ৩০ লক্ষ টাকার নগদ বিকি-কিনি হয়েছে।
