আরও একবার ফুটে উঠল বাংলার প্রতি মোদী সরকারের অবহেলার প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি দেশের ১৯টি রাজ্যে জঙ্গলের আগুন লাগা প্রতিরোধের জন্য প্রায় ৮১৯ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। আর এখানেও বঞ্চনা শিকার হল বঙ্গ। যে ১৯টি রাজ্যের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তার মধ্যে নেই বাংলা। যদিও বনাঞ্চলে আগুন লাগার প্রবণতা থেকে মুক্ত নয় এরাজ্য। অতীতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বনে বড় ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রকল্পে টাকা পাওয়ার জন্য বিবেচিত হয়নি বাংলা। রাজ্যের বনমন্ত্রী বীররাহা হাঁসদা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার তো রাজনৈতিক কারণে সব ব্যাপারে আমাদের রাজ্যকে বঞ্চিত করছে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগে বনসম্পদ রক্ষার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, জঙ্গলে আগুন নিয়ন্ত্রণের এই প্রকল্পটি ১৯টি রাজ্যের ১৪৪টি জেলাতে কার্যকর হবে। মোট ৮১৮.৯২ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দেবে ৬৯০.৬৩ কোটি টাকা। যে রাজ্যগুলি এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে আছে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, অসম, অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশ। এই রাজ্যগুলিকে জঙ্গলের আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। অথচ তালিকায় নেই বাংলা। রাজ্য বনদফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বেশকিছু এলাকা জঙ্গলে আগুন লাগার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর। বনদপ্তরের অনেকগুলি ডিভিশনকে এই ব্যাপারে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে অতীতের আগুন লাগার ঘটনাগুলিকে খতিয়ে দেখার মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন ডিভিশন, যেমন বাঁকুড়া উত্তর, বাঁকুড়া দক্ষিণ, পাঞ্চেত, রূপনারায়ণপুর, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর, বৈকুণ্ঠপুর, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং।
রাজ্য বনদফতর জানিয়েছে যে, অত্যাধুনিক উপগ্রহ ও জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গলের আগুন লাগার ঘটনা দ্রুত চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগুন লাগলেই তা নেভানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বনদফতরের বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় আধিকারিকদের কাছে আগুন লাগার বার্তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পাওয়া গেলে জঙ্গলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জঙ্গলে আগুন লাগলে বনজ অমূল্য প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়। জঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকায় বাসিন্দাদের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। শীতকাল শেষ হওয়ার পরের সময়টা জঙ্গলে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শীতকালে কম বৃষ্টি হলে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তার সঙ্গে জোরালো হাওয়া বইলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। রাজ্যে এবারের শীতকালে বৃষ্টি কার্যত হয়নি। ফলত জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভবানা এবার বেড়ে গিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।