বছরের পর বছর কেটে গেলেও বাংলার প্রতি মোদী সরকারের দুয়োরানিসুলভ আচরণ রয়ে গিয়েছে সেই একইরকম। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পর থেকে তা বেড়েছে আরও। বাংলাকে দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চনা করে আসছে কেন্দ্র। মনরেগা প্রকল্পের আওতায় ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য ন্যায্য টাকা আটকে রাখা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দেরও আভাস নেই কোনওরকম। এই অবস্থায় রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে জবকার্ড হোল্ডারদের বছরে গড়ে ৫০ দিন কাজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ৪৩ লক্ষ শ্রমিক এই প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। গড়ে ৫৩ দিন করে কাজ পেয়েছেন তাঁরা। কর্মদিবস সৃষ্টির নিরিখে প্রথমের দিকে রয়েছে আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রাম, নদীয়া জেলা। ‘কর্মশ্রী’তে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ২ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ শ্রমিক ১৯,৩৫৪টি স্কিমে কাজ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ৫৮ দিন করে কাজ পেয়েছেন শ্রমিকরা।
এপ্রসঙ্গে উক্ত জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, “কেবলমাত্র ১০০ দিনের কাজের জন্য কার্ড রয়েছে যাঁদের, তাঁরাই এই প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন। আগামীতে কাজের গতি আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে।” কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে ১০০ দিনের কাজের বিকল্প হিসেবে এই ‘৫০ দিনের কাজ’-এর প্রকল্প ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বাজেটে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে পৃথকভাবে আর্থিক বরাদ্দ করা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচন পর্বেও প্রকল্পের আওতায় কাজ পেয়েছেন গ্রামের গরিব মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেও এই কাজ থেকে কিছু রোজগার হয়েছে বহু পরিবারের। রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতো উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেও বহু কাজ হয়েছে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের আওতায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৮টি দফতর থেকে বিভিন্ন কাজ দেওয়া হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে চালু হয়েছে ‘কর্মশ্রী’। সেই মতো জবকার্ড হোল্ডারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। মোট ১৯,৩৫৪টি স্কিমে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৮৫ জন শ্রমিক কাজ পেয়েছেন। মোট কর্মদিবস তৈরি হয়েছে ১ কোটি ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৩৩টি। রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে এই জেলার জন্য খরচ হয়েছে ১৯১৪৭.৫৩ লক্ষ টাকা। রাজ্যজুড়ে এই প্রকল্পে ৪২ লক্ষ ৬২ হাজার ২৪০ জন শ্রমিক কাজ পেয়েছেন ২ লক্ষের বেশি স্কিমে। তৈরি হয়েছে মোট ২২ কোটি ৮৪ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৩৩ কর্মদিবস।