দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবার পর থেকেই বারবার ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের বুলি আউড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। অথচ বাস্তব চিত্র যে কথা বলছে, তা একেবারেই বিপরীত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেআব্রু হয়ে পড়েছে দুর্নীতি, অপদার্থতা, অব্যবস্থা। এবার প্রকাশ্যে এল জাল ওষুধের কারবার। আর তা রমরমিয়ে চলছে মোদীর সাধের ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতেই! একাধিক সরকারি হাসপাতালে অবাধে সরবরাহ করা হচ্ছে নকল অ্যান্টিবায়োটিক। ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে স্টার্চ বা শর্করা মিশিয়ে চালানো হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক বলে। সম্প্রতি এক বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে এই ভয়াবহ তথ্য। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, জাল ওষুধ উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সরবরাহের জাল ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরাখণ্ড শুরু করে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যে। তবে কি জাল অ্যান্টিবায়োটিক চক্রের নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশ্রয়? উঠছে প্রশ্ন। নাগপুরের গ্রামীণ পুলিশ কয়েকদিন আগে এই নিয়ে ১২০০ পাতার একটি চার্জশিট পেশ করেছে আদালতে। এই চার্জশিটেই খুল্লমখুল্লা হয়েছে বিপজ্জনক জাল অ্যান্টিবায়োটিক চক্র। হরিদ্বারের একটি ভেটেরিনারি মেডিসিন ল্যাবরেটরি এই জাল অ্যান্টিবায়োটিকের উৎস বলে দাবি করা হয়েছে চার্জশিটে।
প্রসঙ্গত, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী মুম্বই থেকে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে কোটি কোটি টাকা হাওলাচক্রের মাধ্যমে পাঠানো হত এই জাল অ্যান্টিবায়োটিক সংগ্রহের জন্য। তারপরে সেই নকল ওষুধ গোপন চ্যানেলের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হত উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যের নানা সরকারি হাসপাতালে। গত ডিসেম্বরে কল্মেশ্বরের একটি গ্রামীণ হাসপাতালে প্রথম ধরা পড়ে এই জাল অ্যান্টিবায়োটিক। নীতীন ভান্ডারকর নামে এক হেলথ ইনস্পেক্টর চিহ্নিত করেন এই নকল অ্যান্টিবায়োটিক। রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় তা নিয়ে। এরই ভিত্তিতে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট ওষুধ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয় এফআইআর। এরপরেই নাগপুরের গ্রামীণ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তদন্তে নামে পুলিশের একটি বিশেষ টিম। ওয়ারধা, থানে সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় একে একে প্রকাশ্যে আসে নকল ড্রাগ চক্র। চিহ্নিত করা হয় চক্রের পান্ডাদের। প্রথমে গ্রেফতার করা হয় হেমন্ত মূলে নামে একজনকে। নাগপুরে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের টেন্ডার পেয়েছিলেন এই হেমন্ত। এরপরে পুলিশের জালে পড়ে আরও দু’জন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে হরিয়ানা এবং সাহারানপুরের জাল অ্যান্টিবায়োটিক চক্রের মাথাদেরও পাকড়াও করে পুলিশ। ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে শাসকদল বিজেপি। ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। নিন্দার ঝড় বইছে অন্যান্য মহলেও।