মোদী-জমানায় দেশজুড়ে মাথাচাড়া দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। পাশাপাশি ফুটে উঠেছে জাতিবৈষম্যের চিত্রও। দলিতদের উপর নেমে এসেছে নির্মম, এমনকী নৃশংস আক্রমণ। এবার ফের তেমন ঘটনার সাক্ষী রইল দেশ। আর তা ঘটল খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে! বিনা দোষেই এক দলিত যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ উঠল। যুবকের ‘অপরাধ’ ছিল, তিনি উচ্চবর্ণের লোকজনের মত পোশাক পরিধান করেছিলেন! গুজরাটের আহমেদাবাদে ২৪ বছরের ওই দলিত যুবক নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে কিছুদিন আগেই পাগড়ি ও সানগ্লাস পরে ছবি আপলোড করেছিলেন। এই কারণেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করে কিছু উচ্চবর্ণের মানুষ। উত্তর গুজরাটের সবরকান্থা জেলায় হিমতনগর তালুকার সায়েবাপুরে গ্রামে ১৭ জুলাই এই যুবককে নির্মমভাবে পেটানো হয়। ইতিমধ্যেই দায়ের হয়েছে এফআইআর। পেশায় অটোচালক অজয় পারমার নামের এই দলিত যুবককে বেধড়ক মারধর করে চারজন। জানা গিয়েছে, ওই চারজন দরবার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তারা আবার নিজেদের ক্ষত্রিয় বলে দাবি করে। নির্যাতিত যুবক তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানান এদিন অটো করে বাড়ি ফেরার সময় নভনগরের কাছে তাঁকে অভিযুক্তরা অটো থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে তাঁর ছবি নিয়ে আপত্তি তুলে তাকে মারে অভিযুক্তরা।
পাশাপাশি, যুবক আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা তাঁকে জানায় শুধু দরবার সম্প্রদায়ের লোকজনের সাফা (পাগড়ি) ও সানগ্লাস পরার অধিকার রয়েছে। এরপরই মারধর শুরু করে ও ইনস্টাগ্রাম থেকে ছবিটি সরিয়ে নিতে বলে। কোনও মতে সেদিন বেঁচে ফিরেছেন ওই যুবক। শুধু তাই নয়, গ্রামে একদল ব্যক্তি তাঁর উপর চড়াও হয় ও তাঁর বাবাকে রীতিমত অপমান করে ও চড় মারে বলেও জানান তিনি। ঘটনার এক ঘণ্টা পর গোটা বিষয়টি পুলিশে জানানো হয়। জানা গিয়েছে, ওই গ্রামে তাঁরাই একমাত্র দলিত পরিবার। বাকি সকলে দরবার সম্প্রদায়ের। পুলিশ তরফে খবর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত পলাতক। উল্লেখ্য, বিজেপিশাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশের অশোকনগর জেলায় গত মে মাসে একটি ছেলের বিরুদ্ধে মহিলাকে উত্যক্ত করে ও প্রবীণ দলিত দম্পতিকে বেঁধে মারধর করার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। পরানো হয় জুতোর মালা। সবমিলিয়ে দলিতদের ওপর অত্যাচার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আর তার বেশিরভাগই হচ্ছে বিজেপিশাসিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতে। সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। নিন্দায় সরব হয়েছে একাধিক মহল।