এবারের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি বিজেপি। শরিকদের ভরসাতেই তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু তাতেও শিক্ষা হয়নি গেরুয়া শিবিরের। আগের মতোই অটুট সেই অহঙ্কার, সেই দম্ভ। বালাই নেই সৌজন্যবোধেরও। লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের পরেই বিজেপি বুঝিয়ে দিল, সংখ্যা কমলেও সরকার ও সংসদ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের চরিত্র ও মনোভাবের বিন্দুমাত্র বদল ঘটবে না। বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাতের পথেই তারা হাঁটবে।
বুধবার স্পিকার পদে বিজেপি প্রার্থী ওম বিড়লা জিতেছেন ধ্বনিভোটে। অধ্যক্ষ নির্বাচনের পর লোকসভার কক্ষে শিষ্টাচারের যে ছবি ফুটে উঠেছিল, যেভাবে বিরোধীরা নতুন অধ্যক্ষকে অভিনন্দন জানালেন, তাতে মনে হচ্ছিল, শাসক দলের মনোভাবে কিছুটা হলেও বদল ঘটবে। কিন্তু না, সেরকম কোনও লক্ষণই দেখা গেল না। সপ্তদশ লোকসভার মতো অষ্টাদশও যে অভিন্ন, সরকার যে সংঘাতের পথ ছাড়বে না, তা বোঝা গেল অধ্যক্ষের আচরণেই।
অভিনন্দনপর্ব শেষ হওয়ার পরে ওম বিড়লা ১৯৭৫ সালে জারি হওয়া জরুরি অবস্থার উল্লেখ করে এক দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ করেন। তাতে কীভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করেছিলেন, দেশকে জেলখানা বানিয়ে দিয়েছিলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান পদে পদে লঙ্ঘন করেছিলেন, সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করে তাঁকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন ও ওই সময়কে দেশের ইতিহাসের ‘কালো অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করেন।
কংগ্রেসকে আক্রমণ করে স্পিকার বলেন, সে সময় তারা জোর করে বন্ধ্যাত্ব করিয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা যাতে আদালতে যেতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের ওপর জারি করা হয়েছিল যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা। আট মিনিটের দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ শেষে জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের পর স্পিকার সেই সময় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মৃতিতে ২ মিনিট নীরবতা পালনের ডাক দেন। তার পরেই সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেন লোকসভা।
স্পিকার বিবৃতি পাঠ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ করতে থাকেন। শুরু হয় স্লোগান। স্পিকার ও সরকারের মনোভাবের কড়া নিন্দা করে কংগ্রেস সহ বিরোধী সাংসদরা বলতে থাকেন, ৫০ বছর আগের ঘটনা টেনে এই সরকার তাদের অঘোষিত জরুরি অবস্থা চাপা দিতে চাইছে। অধ্যক্ষের এই ভূমিকাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও মোদী সরকার তার আক্রমণাত্মক ভূমিকার বদল ঘটাবে না। সংসদ ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিরোধীদের পক্ষে তেমন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা বৃথা।