সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ভরাডুবি হয়েছে গেরুয়াশিবিরের। প্রসঙ্গত, বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে আগেই হতাশা প্রকাশ করেছিল আরএসএস। আর এবার খোদ আরএসএসের মুখপত্রে স্বীকার করে নেওয়া হল, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য কোনও মুখ নেই পদ্ম-পার্টির! আরএসএসের মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চার বছর পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও গ্রহণযোগ্য, জোরদার মুখ না থাকায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৯,এর পর তিনটি নির্বাচনের দুটিতে ল্যাজেগোবরে হতে হয়েছে বিজেপিকে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২৬-এর ভোট এই রাজ্যে কার্যত বিজেপির শেষ পরীক্ষা। ঊনিশের লোকসভায় পাওয়া ১৮টি আসন থেকে ৬টি আসন কমে গিয়েছে। মোদী-অমিত শাহরা রাজ্যে প্রচারে এসে ৩০ আসন পাওয়ার টার্গেট দিয়েছিলেন দলের বাংলার নেতাদের। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারকাছেও পৌঁছয়নি বিজেপি। এহেন হতাশাজনক ফলাফলের পর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে বঙ্গ গেরুয়াশিবিরের ক্ষমতাসীন শিবির। পাশাপাশি সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। কারণ সিংহভাগ আসনেই নিজের পছন্দের প্রার্থী করেছিলেন শুভেন্দু। মেদিনীপুর আসন থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে দিলীপ ঘোষকে পাঠিয়েছিলেন তিনিই। নতুন আসনে হারতে হয়েছে দিলীপকে। যা নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি।
উল্লেখ্য, আরএসএসের মুখপত্র স্বস্তিকায় ১৭ জুনের সংখ্যায় দিলীপের সেই আসন বদলে দেওয়া ও পছন্দের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, “২০২১-এর বিধানসভা ভোটের পর হারিয়ে যাওয়া নেতা থেকে শুরু করে, অচেনা-অজানা আর চমক দেওয়া প্রার্থী চয়নের ফলে বিজেপিকে বড়রকমের খেসারত দিতে হয়েছে।” এতে পরিষ্কার, প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়টিও পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে আরএসএস। কারও নাম না উল্লেখ থাকলেও এই লেখার মধ্যে নিশানায় যে শুভেন্দু তা মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টি নিয়েও চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে সংঘের মুখপত্রের নিবন্ধে। বলা হয়েছে, “মূলত সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিজেপি ৬ আসন, আনুমানিক ১.৫ শতাংশ ভোট হারিয়েছে। সঙ্গে জুড়েছে নেতাদের ক্লৈব্য আর দৃষ্টিকটু অন্তর্দলাদলির কারণ। ভোটের পরেও যার রেশ চলছে।” আভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে এভাবেই দলের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে আরএসএসের মুখপত্রে। উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্বল সংগঠন আর মানুষের সঙ্গে যোগ কম ছিল নেতাদের। পরাজয়ের নেপথ্যে নিজেদের দোষ দেখাটাই বিজেপি নেতাদের ভবিষ্যতের পক্ষে মঙ্গলজনক। নিবন্ধে বলা হয়েছে, মমতার যথার্থ কোনও বদলি মুখ বিজেপিতে নেই। “পাল্টা নেতৃত্ব এলে বিজেপির দুর্বল সংগঠন চাঙ্গা হবে। হেরো, পলাতক আর অযোগ্য প্রার্থীদের বাতিল করে পশ্চিমবঙ্গের দল হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে বিজেপি”, স্বস্তিকায় লেখা হয়েছে এমনই।