পরাজয়ের পরে রামনাম জপতে বিশেষ দেখা যাচ্ছে না বিজেপিকে। বিজেপি গত কয়েক দশক ধরে রামমন্দিরের নামে বিভাজন তৈরিতে কোনও কসরত করতে ছাড়েনি। ১৯৯২ সালে বাবরি ধ্বংসের পর ২০২৪ সালে রামমন্দির তৈরিকে বিজেপি জয় ভেবেছিল ঠিকই, কিন্তু ফৈজাবাদ ভাবেনি। বিজেপি জনতাকে ভাবাতে চেয়েছিল “জো রাম কো লায়ে হ্যায়, হাম উনকো লায়েঙ্গে”। কিন্তু জনতা বেছে নিল সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদকে, একজন দলিত নেতাকে। বিজেপির লাল্লু সিং রামের নামে ভোট টানতেই পারলেন না।
ভোটের ফল বেরোতেই ডানপন্থী ফেসবুক প্রোফাইলগুলি থেকে অযোধ্যার ভোটারদের অপমান করা, অকথ্য গালিগালাজ করা চলতে থাকে। অর্থনৈতিকভাবে এই মানুষদের বয়কট করার ডাকও দিয়েছে ডানপন্থী প্রোফাইলগুলি! মাত্র ছয় মাস আগেই কোটি কোটি ভারতীয়কে এই ডানপন্থীরাই বুঝিয়েছিল অযোধ্যায় মন্দিরের পর্যটন এই জায়গার অর্থনীতিকে নতুন করে গড়ে তুলবে। মোদি এই মন্দিরটিকে বিশ্বের হিন্দুদের তীর্থ করে তুলবেন।
বিজেপি রাম মন্দির নির্মাণের জন্য যে শুধু পুরস্কার হিসাবে হিন্দু ভোট চেয়েছিল তাই নয়, রামের প্রাণ প্রতিষ্টা অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার জন্য বিরোধী নেতাদের তুলোধোনাও করেছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ‘রামভক্ত এবং রামদ্রোহী’দের মধ্যেকার লড়াই করে তোলেন যোগীও।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশে হারের পরে, রামের নামে প্রচার চালানো আদিত্যনাথ রাম নিয়েও চুপ, ফল নিয়েও চুপ। বিজেপি কেন অযোধ্যা এবং আশেপাশের আসন আম্বেদকর নগর, বাস্তি এবং বারাবাঁকিতে হেরেছে, এই কারণ এখনও জনসাধারণের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেনি বিজেপি। ১৯৮০-৯০ এর দশকে রাম মন্দির আন্দোলনে বিজেপির ওবিসি মাসকট কল্যাণ সিংয়ের ছেলে রাজবীর সিং-এর দখলে থাকা ইটাহ আসনেও কীভাবে হারল বিজেপি, তারও সদুত্তর নেই। ফৈজাবাদে বিজেপির হারের একাধিক কারণ আছে। সাধারণ আসনে একজন পাসি দলিতকে প্রার্থী করা ছিল বিরোধীদের বড় পদক্ষেপ। জনগণ সরকার ও বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে অসন্তোষকে মাথায় রেখেই ধর্মের রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস বলেছেন, যারা অযোধ্যার মানুষকে অপমান করছে এবং নির্বাচনের ফলাফলের জন্য তাদের দোষারোপ করছে তারা তাদের ‘মূর্খতা’ই প্রকাশ করছে। “তারা স্পষ্টতই ভগবান রামের ভক্তি বোঝে না। এই ধরনের লোকেরা, যারা রামকে শুধুমাত্র নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে দেখেন তারা তুচ্ছ এবং ঘৃণ্য,” দ্য ওয়্যারকে বলেছেন সত্যেন্দ্র।
অযোধ্যা এবং রাম কখনই অযোধ্যায় আরএসএস-বিজেপির বিশ্বাসের এজেন্ডা ছিল না। রাম মন্দির একেবারেই ভোট অর্জনের হাতিয়ার ছিল। অযোধ্যার মানুষ এই হাতিয়ারকে ভোঁতা করে দিয়েছেন।