রবিবার তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি শপথ নিয়েছেন আরও ৭১ জন সাংসদ। এর মধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা। যা ঘিরে জোর আএলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। এবার কি মন্ত্রীরা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন? নাকি রাশ থাকবে সচিবালয়ের হাতেই? উঠছে প্রশ্ন। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরই ভূমি অধিগ্রহণ আইনের সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছিল মোদী সরকার। অরুণ জেটলি তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আর চৌধুরী বীরেন্দ্র সিং ছিলেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। ভূমি অধিগ্রহণ আইনের বিষয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনেই পড়ে। অথচ অধ্যাদেশ জারি করার আগে সংশোধিত বিলটি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন অরুণ জেটলি। বীরেন্দ্র সিং নয়। এমনকি বীরেন্দ্র জানতেনই না কী কী সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে। কারণ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবকে ডেকে পাঠিয়ে সবটাই করেছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। বীরেন্দ্রকে জানানোর প্রয়োজনই তাঁরা বোধ করেননি। মোদী জমানায় এরকম প্রচুর উদাহরণ রয়েছে বলেই অভিযোগ। গত দশ বছরে মোদী মন্ত্রিসভার দু-চার জন মন্ত্রী ছাড়া বাকিদের কোনও কাজ নেই। অধিকাংশ মন্ত্রীরই পদ আলঙ্কারিক। আসল কাজ চলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে। সেখান থেকেই মন্ত্রকের সচিবদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ হয়। এমনকী অনেক সচিব তাঁদের মন্ত্রীদেরও অনেক কিছু জানান না বলেই জানা গিয়েছে। বিরোধীরা কেউ কেউ বলেন, মন্ত্রিসভায় ভয়ের পরিবেশ ছিল। অনেক মন্ত্রী শুধু নিজের পদ বাঁচানোর জন্য কখনও বলতেও যাননি, কেন সবটা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দশ বছর এই কেন্দ্রে জোট সরকার ক্ষমতায় বসতে চলেছে। এনডিএ সরকারের মন্ত্রিসভার রবিবার শপথগ্রহণ হয়েছে। অর্থাৎ এই সরকার শরিকদের উপর নির্ভরশীল। তবে অনেকের মতে, মোদী-শাহ ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। নামে এনডিএ সরকার হলেও সেটা জোর করে মোদীর সরকার দেখানোর জন্য শনিবার থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং করানো হয়েছে মোদী ৩.০। তবে রবিবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথের সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠছে যে, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে সব মন্ত্রক চালানোর যে অভ্যাস দশ বছর ধরে তৈরি হয়ে গেছিল, তা কি শরিক দলগুলি মেনে নেবে? তেলুগু দেশম থেকে মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ইয়ারান নায়ডুর ছেলে রাম মোহন নায়ডু। সংযুক্ত জনতা দল থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন রাজীব রঞ্জন সিং লালন। তিনি বেশ পোড় খাওয়া নেতা বলেই পরিচিত। তা ছাড়া ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছেন চিরাগ পাসোয়ান ও স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে তাঁদের কাজ তাঁরা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হতে দেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শুধু তা নয়, অনেকের মতে, এবার মোদীর নেতৃত্বে লোকসভা ভোটে বিজেপি একার ক্ষমতায় ম্যাজিক সংখ্যা টপকাতে না পারার কারণে বিজেপির মধ্যেও একটা প্রেসার গ্রুপ তৈরি হয়েছে। রাজনাথ সিং, নিতিন গডকড়ীর মতো নেতাদের এতদিন মন্ত্রিসভায় ভয়েস ছিল না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে রাজনাথের কথা কতটা চলত তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিজেপির মধ্যে এই অংশকে আগের তুলনায় অনেক সক্রিয় দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় মন্ত্রকের বন্টনের চিত্রে এ বিষয়টা অনেকটা স্পষ্ট হতে পারে বলে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।