আগামিকাল, শনিবার অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটগ্রহণ পর্ব। আর তার আগেই রাজ্যে বসবাস করা কয়েক জনকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বুধবার রাতেই তাঁরা ই-মেল মারফত তা পেয়ে গিয়েছেন। যদিও তাঁরা আদৌ ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে শরণার্থী কি না, সেই প্রশ্ন রয়েইছে। এত দিন পর্যন্ত তাঁদের এ দেশের আধার-ভোটার কার্ডও ছিল। ভোটও দিয়েছেন। সে সবই বা কী করে সম্ভব হয়েছে, তার সদুত্তর মেলেনি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথম দফায় রাজ্যের যে আট জন ‘নাগরিকত্ব’ পেলেন, তাঁদের অধিকাংশই নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। ওই আট জনের অন্যতম, নদিয়ার পায়রাডাঙার বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল জানান, ২০১২ সালের মে মাসে এক রাতে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর ফাঁকি দিয়ে তিনি ভারতে ঢোকেন। আশ্রয় নেন ভীমপুর থানার আসাননগর-পায়রাডাঙা এলাকায় মাসির বাড়িতে। ওই বছরই ‘লোক ধরে’ রেশন কার্ড হয়ে যায় তাঁদের। ২০১৫ সাল নাগাদ আধার, ভোটার এবং প্যান কার্ডও হয়ে যায়। সেই বছরেই পায়রাডাঙায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি শুরু করে দেন। সাইবার ক্যাফে খোলেন।
এরপর ২০১৮ সালে ওই এলাকারই বাসিন্দা সাথী বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সাথীও একই ভাবে বাবা-মায়ের সঙ্গে পায়রাডাঙায় এসে থাকতে শুরু করেছিলেন। বিকাশের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার শৈল্যকুপা থানার গোপালপুর এলাকায়। তাঁর কথায়, ‘এখানে যা জমি-জায়গা ছিল, বেশির ভাগটাই বিক্রি করে দিয়েছি।’ ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়েই এ ভাবে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন? বিকাশ বলেন, ‘সরাসরি উৎপীড়নের শিকার হইনি। কিন্তু সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হত।’
নিয়ম অনুযায়ী, ‘ধর্মীয় শরণার্থী’ বলে ভারতে আশ্রয়প্রার্থী হলে তবেই সিএএ মারফত নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা। তবে বিকাশ জানান, সেই নিয়ম জানা না থাকায় তিনি ‘শরণার্থী’ হিসাবে নিজের পরিচয় দেননি। গত ২৭ মে তাঁকে কৃষ্ণনগরে ডাক বিভাগে শুনানির জন্য ডাকা হয়। নথি হিসাবে তিনি তাঁর বাংলাদেশের জন্ম-শংসাপত্র, ২০১৪ সালের আগে আসার প্রমাণ হিসাবে রেশন কার্ড, হিন্দুত্বের প্রমাণস্বরূপ মায়াপুরের এক আশ্রমের ‘প্রভু’র দেওয়া শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন। দু’দিনের মধ্যে ই-মেল চলে এসেছে। এবার বাবা-মা ও স্ত্রীর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন বলেও বিকাশ জানান।
একই সঙ্গে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটার শান্তিলতা বিশ্বাস, মধ্যমগ্রামের অনির্বাণ নন্দীরাও। গাইঘাটার ঠাকুরনগরের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের শান্তিলতা ও তাঁর স্বামী তারক বিশ্বাস মাস দেড়েক আগে হৃদয়পুরের এক সাইবার ক্যাফে থেকে অনলাইন আবেদন করেন। বারাসত মুখ্য ডাকঘরে শুনানি হয়। বিকাশের মতোই শান্তিলতাদেরও ভোটার, আধার, রেশন— তিন কার্ডই রয়েছে। তারকের দাবি, ‘ওখানে আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল। তার পরেই এ দেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’ শান্তিলতা শংসাপত্র পেলেও তিনি এখনও তা পাননি।