ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আটটি ওয়ার্ড জুড়ে থাকেন একাধিক ভাষার মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে এসে থাকেন তাঁরা। ভোটার হয়ে গিয়েছেন এই কেন্দ্রের। তাই দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের এই বিধানসভা এলাকাকে বলা হয় ‘মিনি ইন্ডিয়া’। যা খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র। ২০১৯ সালে এই বিধানসভার একাধিক ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। যদিও সেই পাশা বদলে যায় ২০২১ সালের নির্বাচন ও উপনির্বাচনে। এবারও সেই ফল ধরে রাখতে মিনি ইন্ডিয়ায় নজর তৃণমূলের।
২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে জিতে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে তিনি ছিলেন সাংসদ। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উপনির্বাচনে লড়তে হয়েছিল তৃণমূল নেত্রীকে। ভবানীপুর কেন্দ্রটিকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা। প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। সেবার মমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান ৭৩,৬৩৫ ভোট। আর নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পান ১৯,৪২২ ভোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫৪ হাজার ২১৩ ভোটে জয়ী হন। মমতা ভোট পেয়েছিলেন ৭৭.৪৬ শতাংশ। সিপিএমের ঝুলিতে যায় মাত্র ২০.৪৩ শতাংশ ভোট।
অন্যদিকে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে যেখানে প্রার্থী ছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানেও ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। উপনির্বাচনের ফলে সেখানেও এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও এই কেন্দ্রেই প্রার্থী হন মমতা। সেবার তিনি পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৫২০ ভোট। শতকরা হিসেবে ৪৮.৫৩ শতাংশ। কংগ্রেস জোটের প্রার্থী ছিলেন দীপা দাশমুন্সি। তাঁকে ২৫ হাজার ৩০১ ভোটে হারিয়েছিলেন মমতা। দীপা দাশমুন্সি পেয়েছিলেন ৪০,২১৯টি ভোট। বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসু। তিনি পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ২৯৯ ভোট। শতকরা হিসেবে ১৯.৪৮ শতাংশ। বিজেপির ভোট প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছিল।
২০২১-এর বিধানসভা ভোট ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমে ভবানীপুর ও নন্দীগ্রাম উভয় কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে শুধু নন্দীগ্রামে প্রার্থী হন তিনি। তাঁর জায়গায় ভবানীপুর থেকে তৃণমূল দাঁড় করায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি পান মোট ৭৩ হাজার ৫০৫ ভোট। একুশের ভোটে এই কেন্দ্রে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিল বিজেপি। তবে রুদ্রর ঝুলিতে যায় ৪৪,৭৮৬ ভোট। শোভনবাবু রুদ্রনীলকে হারান প্রায় ২৮ হাজারের কাছাকাছি ভোটে। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কংগ্রেসের সাদাব খান পান মাত্র ৫২১১ ভোট। তৃণমূল এখানে পায় ৫৭.৭১ শতাংশ ভোট। বিজেপি পায় ৩৫.১৬ শতাংশ ভোট। আর কংগ্রেস পায় মাত্র ৪.০৯ শতাংশ ভোট।
২০১৪ সালে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন তৃণমূলের সুব্রত বক্সী। বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফলে ভবানীপুরে বিজেপির থেকে ১৭৬ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন সুব্রত। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেস পেয়েছিল ১৫,৪৮৪ ভোট। সিপিএম ২১,৯৫৪ ভোট। তৃণমূল ৪৭,২৮০ ও এবং বিজেপি ৪৭,৪৫৬টি ভোট।২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। দক্ষিণ কলকাতায় লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হন মালা রায়। ভবানীপুরে কড়া টক্কর দেয় বিজেপি। বাম ও কংগ্রেস জোট ১৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিল। তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও বিজেপির ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩ হাজার ১৬৮।