প্রায় শেষ লগ্নে এসে দাঁড়িয়েছে লোকসভা নির্বাচন। আগামী ১লা জুন সম্পন্ন হবে সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটগ্রহণ। তার আগে জোরদকমে চলছে শেষ পর্বের প্রচার। আজ, মঙ্গলবার দমদম লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর কলকাতা উত্তর এবং দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মালা রায়ের হয়ে করেন পদযাত্রা। শেষে মমতা সভা করেন বেহালা চৌরাস্তায়। সেখানে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থনে জনসভা করেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে একের পর এক তোপ দাগেন মোদী সরকারকে। তার পর তুলে ধরেন নিজের সরকারের কাজের খতিয়ান। মনে করিয়ে দেন, বেহালায় এখন যে মেট্রো চলছে, তার কাজ শুরু হয়েছিল তিনি রেলমন্ত্রী থাকার সময়। আগে বেহালায় বৃষ্টি হলেই জল জমত। কলকাতা পুরসভা কোটি টাকা খরচ করে তিনটি পাম্প বসিয়েছে। তিনি বাংলায় সরকার গড়ার পর কোন কোন মন্দিরের সংস্কার হয়েছে,তাও জানিয়েছেন মমতা। কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারের কাজ কবে শেষ হতে চলেছে, জানিয়েছেন তাও। তিনি এও জানিয়েছেন, ৩৪ বছরের বাম সরকারকে যদি অপসারণ করা যায়, তা হলে এ বার মানুষের আশীর্বাদে বিজেপি সরকারকেও ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব। মমতার সাফ বক্তব্য, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী আর সাত-আট দিন প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। তার পর আর থাকবেন না। তিনি কাকদ্বীপে দাঁড়িয়ে বলছেন, সাইক্লোন দিল্লী থেকে বসে পর্যবেক্ষণ করেছে। এত মিথ্যা বলা শোভা পায়? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে। ওরা কাজ করলে টাকা দিতে হয়। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় রাজ্যগুলির সঙ্গে চুক্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। গুজরাতের যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, দাঙ্গা করেছেন। তখন সারা দেশের খবর রাখতেন না। আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রেলমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী, কয়লামন্ত্রী ছিলাম। সুব্রত ভট্টাচার্য আমার হাত দিয়ে পুরস্কার নিয়েছিলেন। বুলা চৌধুরী এখন অন্য দল করতেই পারে। আমাকে বলেছিল অর্জুন পুরস্কার চাই। বললাম, আটটার মধ্যে ছ’টায় সোনা পেতে হবে এশিয়াডে। ও পেয়েছিল, আমি দিয়েছিলাম। সচিনের কোচ আচরেকরকে দ্রোণাচার্য দেওয়া হয়নি। আমি দিলাম।’’ পাশাপাশি মমতা মনে করিয়ে দেন, তাঁর সময়েই জাতীয় মহিলা কমিশন তৈরি হয়। ‘‘মানবাধিকার কমিশনের জন্য ২১ দিন ধর্না দিয়েছিলাম। ভুলে গেছেন সেই ভেজাল তেলের কথা? কত রক্ত ঝরেছে। সিপিএম সে দিন লাঠি-গুলি নিয়ে তাড়া করল। আমি একা দাঁড়িয়েছিলাম। কেউ নেই’’, জানান তিনি।
পাশাপাশি মোদী সরকারকে একহাত নিয়ে মমতার প্রশ্ন, ‘‘রঘুনন্দন তিওয়ারিকে মারেনি? ১লা আগস্ট। ৮ই আগস্ট মারল বিমলা দে’কে হাওড়ায়। একটা ঘটনা ঘটেছিল বিষ্ণুপুর আমতলায়। আমার একটা জিপ ছিল। পুলিশ ধাওয়া করছিল। কাছাকাছি চেনাশোনা বাড়িতে গেলাম। আমি শাড়ি চেঞ্জ করলাম। একটা মেয়ের শাড়ি আমি পরি, আমার শাড়ি ওকে দিই। জেমস লং সরণি দিয়ে বেরিয়ে আসি। কিছু ঘটনা বলা হয় না। যিনি বলেন, দিল্লী থেকে বসে সাইক্লোন সামলেছেন, তাঁকে বলব, প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা বলা সাংবিধানিক অধিকার নয়। কাজও নয়। কাকে নিয়ে করিয়েছিলেন? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে? টাকাও দেব, আবার বড় কথা বলবেন! উনি নাকি মা কালীকে ডেকে সাইক্লোন আটকেছে।’’ নাড্ডার মোদী সম্পর্কে প্রশংসামূলক বক্তব্য নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘নড্ডা বলেছেন, উনি সব দেবতার রাজা। আমি বলি, হতেই পারে। কেউ বলেন, জগন্নাথ দেবও ওঁর ভক্ত। সকলে ওঁর ভক্ত হলে, যে দেবতা হয়, তাঁর রাজনীতি, দাঙ্গা করা শোভা পায় না। মন্দির করছি, বসুন, নকুলদানা, ফুল, বেলপাতা দেব। চাইলে ধোকলাও দেব। ভোট ছাড়া তো আসেন না। বিপদে আসেন না। বাংলাকে লাঞ্ছনা করাই ওঁর কাজ। আগে বলত, মমতাজি বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেন না। সরস্বতী পুজো করতে দেন না। সেই বাংলা ইউনেস্কোর তকমা পেয়েছে। দেখ কেমন লাগে! বাংলা কাজ করে না। সব তিনি করেন। কোনও কালো ধন এনেছেন? ওয়াশিং মেশিনে মাফিয়াদের ঢুকে কালোদের সাদা করেছেন। সাধু আপনি! কত রকম কালী হয়, তিনি কী জানেন? আপনি কী করে সাক্ষাৎকার দেন? গত ১০ বছরে কাউকে দেননি। নিজে প্রশ্ন লিখে নিজে উত্তর দেন। জনসমক্ষে হোক। গুজরাতে হবে? আপনি চাইলে আমি যাচ্ছি। দেখব, জ্ঞানভান্ডার কত, কত দেশকে ভালবাসেন! সব বেচে দিল। রেল, সেল, গেল, সব বেচেছে। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি খেল! আমি বর্ধমানে প্রচার করছিলাম। বলেছিলাম, হতে দেব না। করেছি। করে স্টে করে রেখে দিয়েছি। ক’দিন আগে এক জনকে দিয়ে ১৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র খেয়েছে। বিচারপতিকে বলা যাবে না, তাঁর রায়কে বলা যাবে। আমিও আইনজীবী। একটা শংসাপত্র বানাতে কত সময় লাগে! এখন নিজেই অথরাইজ করা যায়। মোদীবাবুর কল হল খুড়োর কল।’’ এরই পাশাপাশি পুলওয়ামা কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলেও সংশয় প্রকাশ করেন মমতা। ‘‘মা-বোনদের অসম্মান করে বিজেপি নির্বাচনী ইস্যু করেছে। বাংলার বদনাম করার চেষ্টা করেছে সন্দেশখালিতে। বাংলার মা-বোনদের এই অসম্মান মেনে নেব না। আজ থেকে পাকিস্তান বলতে শুরু করেছেন। আবার পুলওয়ামা হবে বোধ হয়’’, জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।