লোকসভা ভোটের দফা যত এগাচ্ছে ততই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে গেরুয়া শিবির জয়ের আশা। ফলে লোকসভায় বাংলায় কখনও তাদের টার্গেট হচ্ছে ৩০ তো কখনও আবার কমে দাঁড়াচ্ছে ২৩-২৪। কেউ কেউ বলছে আরও কম। এ রাজ্যে পদ্মে ফোটার পথে সবচেয়ে বড় কাঁটার নাম জঙ্গলমহল। অথচ উনিশে এই লালমাটির দেশই আশীর্বাদের ঝুলি উপুড় করে দিয়েছিল গেরুয়া শিবিরকে। সেই কাঁটা উপড়ে ফেলতেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক আসনকে টার্গেট করছে গেরুয়া শিবির। সেখানে জয় পেতে তাদের হাতিয়ার সেই বিভাজনের রাজনীতি। বারাকপুরের সভা থেকে নরেন্দ্র মোদী যে ‘খেলা’ শুরু করে দিয়েছেন বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।
প্রসঙ্গত, উনিশের লোকসভায় বাংলায় বিজেপির উত্থান ছিল রকেটের গতিতে। লোকসভা আসন ২ থেকে একলাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯। আর এর নেপথ্যে ছিল বাংলার দুই অঞ্চল। উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহল নিজেদের ঝাঁপি উপুড় করে দিয়েছিল বিজেপির কাছে। উত্তরের ৮টি আসনের মধ্যে সাতটি জিতেছিল তারা। জঙ্গলমহলে চারে চার করেছিল তারা। এবার উত্তরে আসন সামান্য কম-বেশি হতে পারে কিন্তু জঙ্গলমহলের ৪ আসন ধরে রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জঙ্গলমহল জয়ের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটার নাম কুড়মি আন্দোলন। উনিশে যাদের ভোট ঢেলে পড়েছিল জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো-সুভাষ সরকার-কুনার হেমব্রম-দিলীপ ঘোষদের পক্ষে তাঁরাই এবার এদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
‘বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে চার কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে কুড়মি সম্প্রদায়। আর সেটাই বিজেপির ভোট অঙ্ক সম্পূর্ণ ঘেঁটে দিয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে কানাঘুষো। উপরন্তু রয়েছে রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর মতো একাধিক প্রকল্প। যা জঙ্গলমহলের পিঁপড়ের ডিম খাওয়া মানুষগুলোর ঘরে গরম ভাতের গন্ধ এনে দিয়েছে। উনিশে হেরেও চার কেন্দ্রেই মাটি কামড়ে পরে থেকেছে তৃণমূল। বার বার এসেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের সেই ‘ইনভেস্টমেন্ট’ ভরপুর ‘রিটার্ন’ দিয়েছে একুশের বিধানসভায়। চব্বিশেও জঙ্গলমহল তৃণমূলকে খালি হাতে ফেরাবে না বলেই প্রত্যয়ী ঘাসফুল শিবির।
উলটোদিকে রাঢ়বঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ হয়েছে বিজেপি। ক্ষোভ বেড়েছে সাংসদদের বিরুদ্ধে। আর তাতেই জঙ্গলমহলে টলমল করছে বিজেপির গদি। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের ক্ষতয় প্রলেপ দিতে দক্ষিণবঙ্গ জয়ে ঝাঁপিয়েছে পদ্ম শিবির। মতুয়াগড় ছাড়াও তাদের টার্গেট কলকাতা উত্তর, দমদম, বারাসত, হাওড়া সদর, আরামবাগের মতো আসন। সেই পরিকল্পনা মতো প্রচারের কার্পেট বম্বিং শুরু করেছে। উত্তর কলকাতার মতো তৃণমূলের শক্তঘাঁটিতে প্রচারে নামছেন মোদী, শাহ, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, যোগী আদিত্যনাথের মতো তাবড় তাবড় নেতারা। হাতিয়ার বিভাজনের রাজনীতি। ইতিমধ্যেই বারাকপুরে সভা সেরে গিয়েছেন মোদী। সেখান থেকে মেরুকরণের তাস খেলেছেন তিনি।