রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এবার জানা গেল, চাকরিতে পদোন্নতিই শুধু নয়, একেবারে শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে একাধিকবার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মী। পুলিশের কাছে বয়ান দিতে গিয়ে এমনই দাবি করেছেন তিনি। পুলিশের কাছে ওই মহিলার অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁকে বলেন, একটি ভাল স্কুলে তাঁকে শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দেবেন। যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির জট খুলতে কাজ করছে জোড়া কেন্দ্রীয় সংস্থা, সেখানে কোন পদ্ধতিতে রাজ্যপাল তাঁকে শিক্ষিকার পদে চাকরি পাইয়ে দিতেন? এই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, রাজভবনের দোতলায় ইপিএবিক্স অফিসে কর্মরত ছিলেন ওই মহিলা। গত ২ মে, যেদিন মহিলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানান, সেদিনই রাজভবনে রাত্রিযাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশকে মহিলা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আলোচনা করার নাম করেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তাঁকে ডেকেছিলেন। ইপিএবিক্স অফিস, রাজ্যপালের দপ্তর ও কনফারেন্স রুম সবই দোতলায়। লালবাজারের দাবি, রাজভবনের কাছ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ চেয়ে চিঠি লেখার পরও কোনও সাড়া মেলেনি। তাই রাজভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পিডব্লুডির কাছ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ নেয় পুলিশ।
পিডব্লুডি পুলিশকে জানায়, দোতলায় কোনও সিসিটিভির ক্যামেরা নেই। একতলা ও রাজভবন চত্বরের চারটি ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করে। প্রায় ১২ ঘণ্টার ওই ফুটেজ পুলিশ খতিয়ে দেখে। তারা জানিয়েছে, একতলায় যে সিসিটিভির ক্যামেরা রয়েছে, তার ফুটেজে দেখা গিয়েছে যে, মহিলার অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ ছাড়াও তাঁকে শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অফার দেন। তিনি কনফারেন্স রুম, রাজ্যপালের অফিস, তাঁর এডিসির দপ্তর পেরিয়ে বাইরে আসার মধ্যেই রাজ্যপাল তাঁর অফিসের তিন আধিকারিককে ইন্টারকমে ফোন করে মহিলাকে শান্ত করার নির্দেশ দেন। সেইমতো এক মহিলা আধিকারিক-সহ তিনজন তাঁকে জোর করে ইপিএবিএক্স রুমে নিয়ে যান।
ওই সময় তিনি করিডরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন। তাঁরা তাঁকে ঘরে আটকে রেখে তিনি যাতে বাইরে গিয়ে কিছু না বলেন, সেই ব্যাপারে চাপ দেন। মোবাইলও কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। এর পর মহিলা কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে একতলায় বিশেষ সচিবের অফিসে যান। সেখানে তিনি আতঙ্কে কাঁপছিলেন। তা দেখে অফিসে থাকা এক চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা করেন। তার পর অভিযোগকারিণী তিনি রাজভবন চত্বর দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওসি (রাজভবন)-এর অফিসে যান। অতিরিক্ত ওসি (রাজভবন)কে বলেন, তিনি অভিযোগ জানাতে চান। তখনও পুরো ঘটনা খুলে বলেননি। হেয়ার স্ট্রিট থানার অতিরিক্ত ওসি রাজভবনে যান। তিনি মহিলা হওয়ার কারণেই অভিযোগকারিণী তাঁকে পুরো বিষয়টি জানান।