প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আচ্ছে দিন’-এর প্রকোপ ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে পেঁয়াজের ওপরে। কলকাতায় যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি ২০ টাকায়, মহারাষ্ট্রের নাশিকের কিষান মান্ডিতে সেই পেঁয়াজের দরই এখন দাঁড়িয়েছে কিলো প্রতি মাত্র পাঁচ পয়সা! তাই চাষিদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপন্ন করা পেঁয়াজ খাচ্ছে গরুতে।
কিছুদিন আগেই নাসিকের এক চাষি সারাবছরের মোট ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে দাম পেয়েছিলেন কিলো প্রতি মাত্র ১ টাকা ৪০ পয়সা করে। অর্থাৎ ওই বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় মাত্র ১০৬৪ টাকা। এরপর আর সময় নেননি তিনি। মহারাষ্ট্রে চাষিরা কেমনভাবে বেঁচে আছেন, তা বোঝাতে পুরো টাকাই তিনি পাঠিয়ে দেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। মানি অর্ডারে ঠিকানা লিখে দেন, ‘নরেন্দ্র মোদী, প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া।’ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ওই চাষি বলেন, ‘টানা চার মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পেঁয়াজ উৎপাদন করার নাকি এই ফল! ফলন ভাল হচ্ছে অথচ দাম পাচ্ছি না। আমরা কী পরিশ্রম করিনা? এই সামান্য টাকা দিয়ে কি করব? তাই প্রধানমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে পুরো টাকাটাই মানি অর্ডার করে দিয়েছি। যার জন্য আমার আরও ৫৪ টাকা খরচ হয়েছে।’
মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে এই ঘটনা সামনে আসার পর গোটা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নামমাত্র তল্লাশি শুরু হয়। প্রসঙ্গত, দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ পেঁয়াজের উৎপাদন হয় মহারাষ্ট্রের নাসিকে। কিন্তু প্রায় ফি বছরই দাম না পেয়ে হতাশ হতে হয় চাষিদের। মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। গতকাল নাসিক থেকে ওই চাষি ফোনে জানান, ‘‘আমরা বলেছিলাম, যেন কোনও পেঁয়াজ-চাষিকে দেনার দায়ে আত্মহত্যা না করতে হয়। পেঁয়াজের বিক্রি করে যাতে আমরা উৎপাদনের খরচটুকু তুলতে পারি, তা দেখুন প্রধানমন্ত্রী’’।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই সমস্ত বিষয়ে নজর দেওয়ার সময় হয়নি। আর এর ফলে চাষিদের অবস্থা হয়ে উঠেছে আরও সঙ্গিন। কিছুদিন আগেই এর মধ্যে সবাই কিষান মান্ডিতে গিয়ে জানতে পারেন, এখন কুইন্টাল পিছু ৫০ টাকা করে পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ, কিলো প্রতি ৫ পয়সা দরে। নিপাডের আর এক পেঁয়াজ চাষি খান্ডু বোরগড়ে বলেন, ‘‘সরকারের উপর ভরসা করেই ভুল করেছিলাম। এখন এত পেঁয়াজ ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ কিন্তু ফেলতে গেলেও তো গাড়িভাড়া আর মজুর লাগবে? সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন গো-পালকেরা। এক চাষি বলেছেন, ‘আমাদের এলাকায় রাজস্থান থেকে আসা অনেক গো-পালকের দল রয়েছে। তাঁরা গরুর গাড়ি নিয়ে এসে পেঁয়াজ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সেই পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।’
ইতিমধ্যেই কৃষক অসন্তোষের ফল হাতেনাতে পেয়ে গিয়েছেন মোদী। সদ্য হয়ে যাওয়া ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। উল্লেখ্য, আজ থেকে ২০ বছর আগে দিল্লির বিজেপি সরকারের পতনের মূলে ছিল ঝাঁঝালো পেঁয়াজই। এবার পেঁয়াজের ঝাঁঝ মোদীকে আরও কতটা কাঁদিয়ে ছাড়ে কিনা, সেটাই এখন দেখার।