বারাসতের কাছারি ময়দানের সভা থেকে সন্দেশখালি কাণ্ডের উল্লেখ করে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নারী ক্ষমতায়নে তাঁর সরকার কী কী করেছে, তা নিয়ে ঢাক পিটিয়েছিলেন। মোদী কি গ্যারান্টির কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই মোদী কি গ্যারান্টি যে আসলে কী এবার তা ১০ দফা জবাবে বুঝিয়ে দিল তৃণমূল।
প্রথমত, বিজেপি সরকার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে একটি আইন এনেছে বলে দাবি। তার বাস্তবতা হল— বিজেপির নেতৃত্বাধীন গুজরাত সরকার বিলকিস বানোর জেলেবন্দি ধর্ষকদের তাড়াতাড়ি মুক্তির অনুমতি দিয়েছে। আবার মুক্তির পর আসামিদের মালা পরিয়ে বরণ করে নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, মোদী কি গ্যারান্টিতে বলা হয়েছে, বিজেপি সরকার মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তার বাস্তবতা হল— বিজেপির আইটি সেলের প্রধান তথা বাংলার সহকারী পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য তাঁর আইটি সেলের জন্য ধর্ষকদের নিয়োগ করেছেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় আইআইটি-বিএইচইউ গণধর্ষণকাণ্ডে জড়িত ছিল।
তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাঁদের কল্যাণে কাজ করছেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাটের মতো জাতীয়স্তরের ক্রীড়াবিদদের রাস্তায় নামিয়ে ছেড়েছেন। রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে মহিলা ক্রীড়াবিদদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। সেই ঘটনায় বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর শাস্তি হয়নি। বরং তাঁকে রক্ষা করা হচ্ছে। চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করবেন বলে মোদী কি গ্যারান্টিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব বলছে, বিজেপি নেতারা একসময় যাঁদের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ তকমা দিয়েছিলেন, তাঁদেরকেই দলে যোগদান করিয়ে ক্লিনচিট দিয়েছেন।
পঞ্চমত, দাবি করা হয়েছে, বিগত এক দশক ধরে বিজেপি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে বিকশিত বাংলা এবং বিকশিত ভারতের জন্য কাজ করেছে। তার বাস্তব চিত্র হল— ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হওয়ার পরে বিজেপি থমকে গিয়েছে। বাংলার ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। দেশের মধ্যে বাংলাই একমাত্র রাজ্য যারা মনরেগার বরাদ্দ পায়নি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে। ষষ্ঠত, প্রধানমন্ত্রী নারী সম্মানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নারীদের সেবায় তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে দাবি মোদী কি গ্যারান্টিতে। কিন্তু বিজেপি সেই নারী-বিদ্বেষী পবন সিংকে প্রার্থী করেছেন, গানের মধ্য দিয়ে যিনি বাংলার মহিলাদের অপমান করেছেন।
সপ্তমত, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে ভূমি দেশকে মা সারদার মতো এক আইকন দিয়েছে, সেই বাংলাকে তিনি সম্মান করেন। আর বাস্তব বলছে, বিজেপি ইন্টারনেটে মা সারদা দেবীর অশ্লীল ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেছে। অষ্টমত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে বাংলায় ২৪ লক্ষেরও বেশি বাড়ির অনুমোদিত হয়েছে বলে দাবি। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল— মোদী সরকার বাড়ির জন্য বরাদ্দ আট হাজার কোটি টাকারও বেশি আটকে রেখেছে। নবমত, প্রধানমন্ত্রী সংসদে মহিলাদের সংরক্ষণের গ্যারান্টি দিয়েছেন এবং তা পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রথম তালিকায় মাত্র ৩ জন মহিলাকে প্রার্থী করা হয়েছে বাংলায়। সারা দেশে ১৯৫ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২৮টি আসনে মহিলা প্রার্থী। দশমত, বিজেপি মহিলাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে চায় বলে মোদী কি গ্যারান্টিতে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু মণিপুরের মহিলারা এখনও মোদীর বার্তা পাননি।