কেউ প্রকাশ্যে ইন্ডিয়া নিয়ে মুখ না খুললেও জোটের ভবিষ্যত নিয়ে চর্চা চলছে বেশ কিছু দিনধরেই। ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলায় একাই লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। আর মমতার এই সিদ্ধান্তের পরেই নানাভাবে তৃণমূলের মন ভোলাতে সচেষ্ট কংগ্রেস। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড়া জোটের কথা ভাবাই যায় না। এমনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া অর্থ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবারও করেছেন। কিন্তু সূত্রের খবর, কিছুতেই চিঁড়ে ভিজছে না। রাহুলের চিঠিকে গুরুত্বই দিতে চাইছেন না মমতা এবং তাঁর দল। কংগ্রেসকে দু’টি আসন দেওয়া তো দূরস্থান, সেখানে একলাই কোমর বেঁধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে শাসক শিবির।
এক কথায়, রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়েই লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা এখনও রয়েছে তৃণমূলের। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কংগ্রেসের ওপর চাপ তৈরির জন্যও এমন কৌশল নেওয়া হতে পারে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, পুরো দোষ কংগ্রেসের। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের গোড়া থেকেই আসন বণ্টনের সময়সীমা ধার্য করার জন্য বলে এসেছে তৃণমূল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতা বা নেত্রী। যা কথা হয়েছে তা অন্য নেতাদের মারফত। অন্য দিকে এখনও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, তারা মমতার দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করে চলেছে। তৃণমূলের পাল্টা জবাব, কংগ্রেস এই কথাগুলি বলছে এই বার্তা দেওয়ার জন্যই যে পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোট কার্যকর না হওয়ার দায় যেন তাদের গায়ে না লাগে।
তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, এক দিকে ‘চেষ্টার’ কথা বলা, অন্য দিকে লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীকে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল সরকারকে চূড়ান্ত অপদস্থ করার কাজটিও কংগ্রেস চালিয়ে গিয়েছে। এক শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে দেখছে অধীর চৌধুরীর চোখে। এটা মেনে নিতে পারি না।’ তৃণমূল সূত্রের দাবি, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে রাহুল গান্ধীর ওপর। অভিযোগ, তাঁদের ‘যোগসাজশে’র ফলে জোটের তারিখ স্থির করা নিয়ে টালবাহানা করা হয়। সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনেও কংগ্রেস তৃণমূলের এই মনান্তর চোখে পড়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মল্লিকার্জুন খাড়গের সংসদীয় অফিসে ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যদের ডাকা হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণ যে শুধু তৃণমূলই প্রত্যাখ্যান করেছে তাই-ই নয়, যায়নি ‘ইন্ডিয়া’র ভিতরে ‘জিঞ্জার’ গোষ্ঠী তথা এসপি, আপ-ও।