এবার কি সাহিত্য নিয়েও শুরু হল ভাগাভাগির রাজনীতি? সাহিত্যেও বসল কাঁটাতার? শনিবার সন্ধ্যায় শিলচরে গেরুয়া তাণ্ডবের মুখে পড়লেন বাংলার কবি শ্রীজাত। গতকাল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আহ্বানে শিলচর গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছিলেন স্থানীয় অন্যান্য কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকরাও। গেরুয়া শিবিরের হাঙ্গামায় ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় আটকে পড়েন শ্রীজাত-সহ সকলেই। যার ফলে আবারও প্রকাশ্যে চলে এল আসামের বাঙালি বিদ্বেষ।
‘এসো বলি’ নামের এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্বোধন উপলক্ষে শিলচর পার্ক রোডের রিয়া প্যালেস হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষেই আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন কবি শ্রীজাত। অনুষ্ঠানে শ্রীজাতের বক্তব্যের পর যখন এলাকার বাচিক শিল্পীদের সম্মাননা জ্ঞাপন চলছিল, তখনই সেখানে উপস্থিত হন বিজেপি নেতা বাসুদেব শর্মা।
জানা গেছে, সভাকক্ষে উপস্থিত হয়েই অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। শুরুতে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়, কিন্তু তাঁরা অধৈর্য হয়ে উঠলে তাঁদের মাইক ছেড়ে দেওয়া হয়। মাইক নিয়ে শ্রীজাতর লেখা কবিতার লাইন উল্লেখ করে সেই লাইনের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় কবিকে। শ্রীজাতের উদ্দেশ্যে বাসুদেবের প্রশ্ন ছিল, মহাদেবের ত্রিশূল নিয়ে অমন ধর্মবিরোধী কবিতা কবি লিখলেন কী করে?
এ ঘটনার প্রতিবাদ ওঠে সভাস্থল থেকেই। উপস্থিত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের তরফ থেকে সমস্যাসৃষ্টিকারীদের বের করে দিতে বলা হয়। বাসুদেব এবং বাকিরা সে সময়ে হল ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও, বাইরে জড়ো হতে থাকেন ওই হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় বিক্ষোভ। কিছুক্ষণ পর ধেয়ে আসে বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইট। যাতে ভেঙে যায় হোটেলের জানলার কাচ।
শিলচরের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন কাছাড় কলেজের অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস। তিনি জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষ এরপর বলে দেন, সভার কাজ তাঁরা আর চালাতে দিতে পারবেন না। বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইকের সংযোগ। এর পরেও বিনা মাইকে সভার কাজ চলতে থাকে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হতে থাকে, আটকে পড়েন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অভ্যাগতরাও।
জানা গেছে, অভ্যাগতদের তরফ থেকে পুলিশ সুপারকে খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়। তবে পুলিশ এলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেই অভিযোগ। সংগঠকদের মূল সমস্যা শ্রীজাতর লেখা একটি কবিতা নিয়েই, যে কবিতা লেখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কেস পর্যন্ত করা হয়েছিল।
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে, স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্বাক বলেন, ‘শিলচরের পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ হচ্ছে। বাইরে থেকে এ শহর সম্পর্কে নানা ধারণা সম্প্রতি তৈরি হচ্ছে বটে, কিন্তু এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি।’ অন্যদিকে শ্রীজাত বলেন, ‘শিলচরের মানুষ যেভাবে আমাকে আগলে রাখলেন, সেই ঋণ সঙ্গে নিয়েই ফিরব।’ এসো বলি-র মুখ্য কর্মকর্তা সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত জানিয়েছেন, সব কিছুর পরও শিলচরের মানুষ শ্রীজাতের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে শ্রীজাতরই জয় হয়েছে।