দিন কয়েক আগেই লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তারই বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো এই মুহূর্তে সোশ্যাল ভিডিয়ায় ভাইরাল। আর তেমনই কিছু ছবিতে মলদ্বীপের মন্ত্রীরা মোদীকে ‘পুতুল’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইজরায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়। কিন্তু ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে মলদ্বীপকে বয়কট করার হিড়িক উঠেছ। পরিবর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে লাক্ষাদ্বীপ। আরব সাগরের উপরে মাত্র ৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে লাক্ষাদ্বীপ। খাতায়কলমে দ্বীপের সংখ্যা ৩৬টি। তবে সবই সমুদ্রের মাঝে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েক খণ্ড জমি।
মলদ্বীপ নিয়ে বিতর্কের আবহে দলে দলে সকলে লক্ষদ্বীপের দিকে ঝুঁকেছেন বটে, তবে এই দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া কিন্তু খুব একটা সহজ এবং মসৃণ নয়। রয়েছে একাধিক বাধা। লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার জন্য সবার আগে প্রবেশের অনুমতিপত্র জোগাড় করতে হয় পর্যটকদের। ভারতীয় হোক বা বিদেশি, এই নিয়ম সকল পর্যটকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভারতীয়েরা লক্ষদ্বীপের মাত্র পাঁচটি দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারেন। সেগুলি হল— অগাতী দ্বীপ, বাঙ্গরম দ্বীপ, কবরত্তী দ্বীপ, কদমত দ্বীপ এবং মিনিকয় দ্বীপ। বিদেশি পর্যটকদের জন্য লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ আরও সীমিত। তাঁরা লক্ষদ্বীপের মাত্র তিনটি দ্বীপে ঘুরতে পারেন। সেগুলি হল— অগাতী দ্বীপ, বাঙ্গরম দ্বীপ এবং কদমত দ্বীপ। এ ছাড়া লাক্ষাদ্বীপের অন্য কোনও দ্বীপে যদি কেউ যেতে চান, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র আনতে হয়। তা না হলে এই পাঁচ দ্বীপের বাইরে অন্য কোথাও কোনও পর্যটকই পা রাখতে পারেন না।
লক্ষদ্বীপ যাওয়া যায় দু’রকম ভাবে— আকাশপথে এবং সমুদ্রপথে। উভয়ক্ষেত্রেই কোচি হয়ে লাক্ষাদ্বীপ যেতে হবে। অন্য কোনও প্রান্ত থেকে এই দ্বীপে যাওয়া যায় না। লাক্ষাদ্বীপে একটিমাত্র বিমানবন্দর রয়েছে। অগাতী বিমানবন্দরই সেখানে আকাশপথে যাতায়াতের একমাত্র ঠিকানা। কোচি থেকে রোজ ওই বিমানবন্দরে যাওয়ার একটি করে বিমান ছাড়ে। অ্যালায়েন্স এয়ারলাইন্স নামের একটিমাত্র বিমান সংস্থা লাক্ষাদ্বীপের বিমান চালায়। প্রতি দিন একটিমাত্র বিমান সেখানে যাতায়াত করে। অগাতী পর্যন্ত বিমান পরিষেবা থাকলেও অন্য কোনও দ্বীপে বিমানবন্দরই নেই। ফলে সেখানে যেতে হলে অগাতী থেকে নৌকা অথবা হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হয়, যা খরচসাপেক্ষ। কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপের জাহাজ ছাড়ে। ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা লাগে জলপথে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে লাক্ষাদ্বীপ পৌঁছতে। তবে সেখানে পৌঁছনোর পর নৌকা পরিষেবা কেমন হবে, তা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে।
লাক্ষাদ্বীপে ঢোকার প্রয়োজনীয় প্রবেশপত্রের জন্য অনলাইন মাধ্যমে আবেদন জানানো যায়। অনলাইনে সেই ফর্ম ভরে কোচিতে লক্ষদ্বীপ প্রশাসনের অফিসে নিয়ে যেতে হয়। এর পর অন্তত ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয় প্রবেশপত্র পাওয়ার জন্য। এর জন্য দরকার হয় পর্যটকের পাসপোর্ট আকারের ছবি, আধার কার্ড, বিমান বা জাহাজের টিকিট এবং হোটেল বুকিংয়ের কাগজ। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে এখনও পুরোদমে গড়ে উঠতে পারেনি লাক্ষাদ্বীপ। সেখানে পর্যটকদের জন্য হোটেলের সংখ্যা অতি সীমিত। হাতে গোনা কিছু হোটেল এবং রিসর্ট আছে লাক্ষাদ্বীপে। আগে থেকে সেখানে ঘর বুক করে যেতে হয়। একটি সাক্ষাৎকারে লাক্ষাদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জল জানিয়েছেন, গোটা দ্বীপটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য ঘরের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। কোরাল দিয়ে তৈরি লাক্ষাদ্বীপ। কাতারে কাতারে পর্যটক ধারণ করার ক্ষমতা নেই তার। তাই পরিবেশ বাঁচিয়ে পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরা লাক্ষাদ্বীপে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।