২০০২ সালে সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয় গোটা গুজরাত জুড়ে। আর সেই সময়েই গণধর্ষণ করা হয় ২১ বছর বয়সি তরুণী বিলকিস বানোকে। ২০২২ সালের ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসে সেই গণধর্ষণ কাণ্ডের ১১ জন দোষীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল গুজরাতের বিজেপি সরকার। তবে শেষমেশ তাঁদের জেলে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মোদী সরকারের কোনও মন্ত্রী বা বিজেপির কোনও নেতা এই রায়কে স্বাগত জানাননি। যা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী যতই তিন তালাক রদ করে বা মহিলা সংরক্ষণের বিল পাশ করিয়ে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক জয়ের চেষ্টা করুন, বিজেপির এই আচরণ থেকেই মহিলাদের সম্পর্কে তাঁদের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সুপ্রিম কোর্ট বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য গুজরাত সরকারকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলেছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেছিলেন, গুজরাত সরকার নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। অপরাধীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেছে গুজরাত সরকার। বিলকিসের ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়া-র সমস্ত দল এই রায়কে স্বাগত জানালেও বিজেপি মুখে কুলুপ এঁটেছে। সাধারণত বিজেপির সদর দফতরে দলের মুখপাত্ররা নিয়মিত কোনও না কোনও বিষয়ে সাংবাদিক
সম্মেলন করে থাকেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে বুঝে সোমবার বা মঙ্গলবার বিজেপি কোনও সাংবাদিক সম্মেলনও ডাকেনি।
কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যে গোধরার জেলের উপদেষ্টা কমিটি ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছিল, তাতে গোধরার প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক ও মন্ত্রী চন্দ্রসিন রাউলজি ছিলেন। বিজেপি তাঁকে গুজরাতের ভোটে প্রার্থী করেছিল। ওই কমিটিতে বিজেপির আরও তিন জন নেতা ছিলেন। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের মন্তব্য, ‘বিজেপি নেতৃত্বের আসলে বিলকিস বানোর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তাঁকে মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র ও গুজরাত সরকার বারবার হেনস্থা করেছে।’ অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে বলেন, ‘মোদী সরকারের কোনও মন্ত্রী বা বিজেপির কোনও নেতা বিলকিস বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাননি। সুপ্রিম কোর্ট ১১ জন ধর্ষণকারী ও খুনিকে জেলে ফেরত পাঠানোয় বিজেপি যে হতাশ, তার এর থেকে বড় প্রমাণ হয় না। গুজরাত সরকারই ষড়যন্ত্র করে তাদের মুক্তি দিয়েছিল। শুধু ভোটের জন্যই ‘নারী শক্তি’ নরেন্দ্র মোদীর ভুয়ো হাতিয়ার।’