একধাক্কায় ৩,৫৬২ টাকা বেতন বাড়ল বাংলার প্রায় আড়াই লাখ জুট মিল শ্রমিকের। সঙ্গে মিলবে অন্যান্য সুবিধাও। জুটমিলের ক্ষেত্রে একে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলার ১১৩টি জুট মিল শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বুধবার জুটমিলের মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ, সেই সংগঠনের বাইরে থাকা জুটমিলের প্রতিনিধি ও সব মিলিয়ে ২৪টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে রাজ্য শ্রম দপ্তরের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক তথা তৃণমূল জুট ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোমনাথ শ্যাম প্রমুখ। রাজ্য সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত।
চুক্তির মূল বিষয়:
নতুন যে সব শ্রমিক জুটমিলের কাজে যোগ দেবেন তাঁদের মোট বেতন বা গ্রস স্যালারি হবে মাসিক ১৪,০৬৬ টাকা যা আগের নতুন যুক্ত হওয়া শ্রমিক যা পেতেন তার থেকে প্রায় ৩৫৬২ টাকা বেশি। নতুন শ্রমিক পিছু কোম্পানির খরচ অর্থাৎ সিটিসি বাড়বে ৪৫৫০ টাকা। সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকদের বর্তমান মোট মাসিক বেতন ১৬,৭১৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১৭,২৭১ টাকা। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৫৫৩ টাকা। ২০১৯ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট মাসিক বেতন ১৩,৫৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৪,১৩২ টাকা হবে। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৫৮৬ টাকা। ২০০২ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট মাসিক বেতন ১৫,২১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৫,৮৩৭ টাকা। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৬২৭ টাকা।
বর্তমানে জুটমিলের কর্মরত সমস্ত শ্রমিকের অ্যাড হক ১৩০ টাকা অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
সমস্ত ধরনের শ্রমিকদের বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে।
আগে সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকরা দৈনিক ৫০ পয়সা এবং নতুন শ্রমিক ১৫ টাকা করে হাজিরা ভাতা পেতেন। নতুন চুক্তির মাধ্যমে সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকরা দৈনিক ১ টাকা এবং ন্যূনতম দৈনিক ৪৮৫ টাকা বেতনে নিযুক্ত শ্রমিকরা দৈনিক ২০ টাকা হাজিরা ভাতা পাবেন।
এই প্রথম জুটমিলের শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী চার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, অদক্ষ, অল্প দক্ষ, দক্ষ ও বেশি দক্ষ।
এই চার ভাগে সমস্ত শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী ভাগ করে তাদের নির্দিষ্ট ফিটমেন্ট ভাতা দেওয়া হবে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্টেট প্রোডাক্টিভিটি কাউন্সিলের পরামর্শ নিয়ে শ্রমিকদের কাজের বোঝা, গ্রেড ও স্কেল নির্ধারণ করা হবে।
তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি তো বটেই, উল্লেখযোগ্যভাবে চুক্তিতে সই করেছে সিটু-সহ সব শ্রমিক সংগঠন। চুক্তির পর শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। ২৩টি ইউনিয়ন সই করেছে। বাম আমলে এঁদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের সবার্থরক্ষায় এগিয়ে এলেন’।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উদ্যোগে ঐতিহাসিক চুক্তি সই হল। বাম জমানায় মাত্র ৫০ পয়সা বা এক টাকা বেতন বাড়ত, শুধু তাই নয়, বেতন কমানোর নজিরও রয়েছে। এখন থেকে শ্রমিকদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে, এটাই আনন্দের’।
চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর আনন্দে মেতে ওঠেন জুটমিল শ্রমিকরা। পাটশিল্প এলাকায় অকাল হোলি শুরু হয়। হুগলি নদির দুই ধারে আবির খেলায় মেতে ওঠেন অনেকে। এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন সমস্ত শ্রমিক সংগঠনই।