সারা বিশ্বের ১৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের নাম রয়েছে ইজরায়েলি নজরদারি সংস্থা এনএসও-র তালিকায়। আন্তর্জাতিক তদন্ত-রিপোর্টে এমনটাই উঠে এসেছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্টে হইচই পড়ে গেছে। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, তদন্তমূলক সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁদেরই টার্গেট করছে ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস। ভারতের দুই সাংবাদিকের আইফোনে আড়ি পাতছে পেগাসাস যাঁরা আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে তদন্তমূলক রিপোর্ট ছাপছেন।
২০২১ সালে পেগাসাস কাণ্ড সামনে আসায় তাই তোলপাড় শুরু হয়েছিল দেশজুড়ে। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেখানে অবশ্য টেকনিক্যাল কমিটি জানিয়ে দেয় যে, পেগাাসাসের মতো স্পাইওয়্যার সবসময় ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পেগাসাস দিয়ে আড়ি পাততে হলে তার জন্য আলাদা কন্ট্রোল ইউনিট খুলতে হবে। তাই ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে মামলা খারিজ হয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টে। এরপর দু’বছর কেটে গেছে। এখন হঠাৎ করেই পেগাসাসের নজরদারি দিয়ে রিপোর্ট বের করেছে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের দাবি, বিশ্বের নামী সাংবাদিকদের আইফোনে গোপনে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে পেগাসাস। এবারের শিকার দুই খ্যাতনামা সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে একজন আবার আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তমূলক রিপোর্ট বের করেন।
মার্কিন সংবাদপত্রের দাবি, ‘দ্য ওয়্যার’ নিউজ পোর্টালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন ও ‘দ্য অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট’ (ওসিসিআরপি)-এর দক্ষিণ এশিয়ার সম্পাদক আনন্দ মাঙ্গনালের আইফোনে নজরদারি চালাচ্ছে পেগাসাস। ভারত সরকারের মদতেই এই নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের আরও দাবি, গত কয়েকমাস ধরেই খ্যাতনামা সাংবাদিকদের আইফোনে অ্যাপলের সতর্কবার্তা আসছিল যে রাষ্ট্রের মদতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নজরদারি চালাচ্ছে। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে।
ইজরাইলের প্রাক্তন সাইবার গোয়েন্দাদের হাত ধরে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল এনএসও গ্রুপ। তাদেরই তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার। এটি ব্যবহার করে বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ-সহ বিভিন্ন পেশার বহু ব্যক্তির স্মার্টফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে জানা যায়।এনএসও গ্রুপের দাবি, গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের বাইরে পেগাসাস সফটওয়্যারকে কাজে লাগানো মানে তা এটির অপব্যবহার করা। এ কথা পেগাসাসের চুক্তিতেও উল্লেখ করা রয়েছে। এনএসও আরও দাবি করেছে, কেউ যদি এটির অপব্যবহার করে, তা জানতে পারলে এনএসও-র তরফে পদক্ষেপ করা হয়। এর আগে ফ্রান্সের পাঁচ মন্ত্রীর ফোনে পেগাসাস আড়ি পেতেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।