আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলে। অতিসম্প্রতিই কলকাতার বুকে চূড়ান্ত ফ্লপ হয়েছে অমিত শাহের সভা। দেশের ৩ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দলের জয়ের মধ্যে দিয়েই তাই শাহি সভার ফ্লপের হতাশা কাটিয়ে উঠতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। বাংলার রাজনীতির উঠোনে খানিক শক্ত জমি খুঁজছে পদ্মশিবির। কিন্তু সোম সন্ধ্যায় তাঁদের দিকে আবারও কটাক্ষের তির ছুঁড়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়েছেন, “মাত্র একটা নির্বাচনে জিতে বাবুদের কী অবস্থা! বিধানসভার বাইরে লাড্ডু বিলোচ্ছে! আমি বলব, পারলে তিন দিন ধরে লাড্ডু বিলাও। বেল পাকলে কাকের কী? ওটা কংগ্রেসের পরাজয়, মানুষের পরাজয় নয়। আমি দুর্বল নই। লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি আগে ৫টি আসন পেয়ে দেখাক!” অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির বাংলা দখলের আশা দিবাস্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে জোর চর্চা চলছে মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবিকে ঘিরেই। সবার একটাই প্রশ্ন, “সত্যিই কী ৫টাও মিলবে না?” বীরভূমের জেলা সদর সিউড়ি শহরের বেণীমাধব ইন্সটিটিউশনের মাঠে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ ২৪-এর ভোটের জন্য বাংলা থেকে ৩৫টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বঙ্গ বিজেপির হাল দেখে তিনি কলকাতার ধর্মতলায় এসে আর সেই বিষয়ে কথা বলেলনি। কার্যত তখন থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, বাংলা থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি আসন পাবেন এমন হিসাব রাখছেনই না। শাহ সরাসরি এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও নানা ঘটনায় এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, বাংলাকে ঘিরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আর সেভাবে কোনও আশা আকাঙ্ক্ষা নেই। বাংলাকে দলের তালিকা থেকে কার্যত বাদই দিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
ফলত, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বঙ্গ বিজেপিকে বার্তা পাঠিয়েছে, ৩৫টা না হোক অন্তত ২৫টা আসনে যেন জয় আসে। কিন্তু বিজেপি কি আদৌ ১টা আসনও জেতার গ্যারেন্টি দিতে পারে? এটা মুখ্যমন্ত্রীও বুঝে গিয়েছেন। তাই তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগে ৫টা লোকসভা কেন্দ্র জিতে দেখাক বিজেপি। আসলে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বিজেপি এখন জেতা আসনও ধরে রাখার মতো অবস্থায় নেই। সেই হিসাবে একুশের ভোটে বিজেপি যে ৭৭টি আসন জিতেছিল, তার সব আসনে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আদৌ তৃণমূলকে পিছনে ফেলতে পারবে কিনা তা নিয়ে ঢের সন্দেহ আছে। একুশের ভোটের নিরিখে বাংলার মাটিতে বিজেপি মাত্র ৯টি লোকসভা কেন্দ্রে এগিয়ে আছে। এই কেন্দ্রগুলি হল, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, রানাঘাট, বনগাঁ, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর, আরামবাগ, দার্জিলিং ও কাঁথি। বাকি সব কেন্দ্রেই লিড তুলে নিয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ ২৪-এর ভোটে বিজেপি কাছে মাত্র এই ৯টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে তাঁরা তৃণমূলকে কিছুটা হলেও লড়াই দিতে পারবে। কিন্তু সত্যিই তা সম্ভব কিনা, তা ঘিরে ঘনীভূত সংশয়। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার সংসদীয় কেন্দ্রের কোনও পঞ্চায়েত সমিতি বা পুরসভা বিজেপি দখল করতে পারেনি। রানাঘাট ও বনগাঁর মতুয়া ভোট পদ্মশিবিরের হাতছাড়া। পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুরেও দলের প্রদীপ নিভু নিভু। দার্জিলিংয়ের গোর্খা ভোটও হাতছাড়া। অতএব হাতে রইল মাত্র ২টি আসন, আরামবাগ আর কাঁথি। মমতার কথাই কি তাহলে ফলে যাবে শেষমেশ? সেই ভয় ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে পদ্মশিবিরের অন্দরে।