নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় ক্রমশই ক্ষোভ বাড়ছে দেশের উত্তর-পূর্বে। আরও স্পষ্ট করে বললে আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডে। দফায় দফায় পথ এবং রেল অবরোধ থেকে শুরু করে পোশাক খুলে বিক্ষোভ দেখানো, বুধবার চলল এই সবকিছুই। তবে সব থেকে বড় খবর আসামে বিজেপির সংসারে ভাঙন। নাগরিকত্ব বিলের বিরোধীতায় ইস্তফা দিলেন অগপ মন্ত্রীরা।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আরেক শরিক বড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট (বিপিএফ)-ও এদিন নাগরিকত্ব বিল নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এমনকি দলের ভেতরেও অসন্তোষ। বিধানসভার স্পিকার হিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী নাগরিকত্ব বিল পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন। জোরহাটের বিজেপি বিধায়ক তিনি।
আবার ত্রিপুরাতেও বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে উপজাতি এলাকায়। মিজোরামের ক্ষমতাসীন এমএনএফ আগেই জানিয়ে দিয়েছে, বিজেপির পাপের ভার তারা নেবে না। মেঘালয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-ও ছাড়তে চলেছে গেরুয়া শিবির। আর আসামের বাঙালিদের বড় একটি অংশ তো এনআরসির কারণে আগে থেকেই ক্ষিপ্ত গেরুয়া শিবিরের ওপর। সব মিলিয়ে আসাম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঘোর সঙ্কটে বিজেপি।
বুধবারই আসামের রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন অগপর তিন মন্ত্রী অতুল বরা, কেশব মহন্ত ও ফণিভূষণ চক্রবর্তী। দলের শীর্ষ নেতা প্রফুল্লকুমার মহন্ত মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে ইস্তফার পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, সর্বানন্দও এক সময়ে অগপ দলে ছিলেন।
মহন্ত এদিন বলেন, বিজেপির উচিত নতুন করে জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় বসা। অগপর সঙ্গে জোট করেই বিজেপি আসামে ভোটে জিতেছিল, এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন মহন্ত। এর পাশাপাশি, বিপিএফের মন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম এদিন মন্তব্য করেন, বড়োল্যান্ড এলাকায় বিদেশিদের কোনও জায়গা নেই। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপির অন্দরেও। ইতিমধ্যেই দলের মুখপাত্র মেহেদি আলম বোহরা ইস্তফা দিয়েছেন। গোটা রাজ্যেই চলছে বিক্ষোভ, সঙ্ঘর্ষ। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের ছাবুয়ার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। শিবসাগর জেলায় বিজেপি পার্টি অফিস লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা পচা ডিম ছুঁড়ে মারেন। বহু জায়গাতেই আধাসেনা ও পুলিসের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ চলে বিক্ষোভকারীদের। চলছে গাড়ি, বাড়ি ভাঙচুর।
গুয়াহাটির ঐতিহ্যশালী কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে শুরু হয়েছে ক্লাস বয়কট। আন্দোলনকারীদের কড়া হাতে মোকাবিলা করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। অসমিয়া সংবাদ মাধ্যমের খবর, বিক্ষোভের ভয়ে তিনি নিজেই তাঁর কর্মসূচি কাটছাঁট করছেন।
ত্রিপুরাতেও অশান্তি। উপজাতি এলাকায় উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে সামাজিক গণমাধ্যম। মঙ্গলবার জাতীয় সড়ক অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিসের সঙ্ঘর্ষ বাধে। পুলিশ গুলিতে গুরুতর জখম হন ৬ জন।
লোকসভায় নাগিরিকত্ব বিল পাস হওয়াকে আসাম-সহ গোটা দেশের কাছে ‘কালাদিবস’ আখ্যা দিয়ে আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘বিলটি পাস করে বিজেপি ফের গৈরিকিকরণের নজির গড়ল।’