সারা দেশে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হিন্দী বাধ্যতামূলক করা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। কে কস্তুরীরঙ্গন কমিটির ‘নিউ এডুকেশন পলিসি’ (এনইপি) বা নয়া শিক্ষা নীতিতে সামনে এসেছে এই প্রস্তাব। আর তারপর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। বিশেষত দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে এই নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আশ্বাস দিয়েছেন, কোনও ভাষাই চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
আগামী দিনে শিক্ষার গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য কে কস্তুরিরঙ্গের নেতৃত্বে একটি ৯ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছিল মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কমিটির জমা দেওয়া সুপারিশগুলির মধ্যে অন্যতম ভাষা, বিজ্ঞান ও অঙ্ক, এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা। এই ত্রিমুখী নীতিতে বলা হয়েছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হিন্দীর পাঠ বাধ্যতামূলক। বিজ্ঞান এবং অঙ্ক সারা দেশে একই রকম সিলেবাস। এছাড়াও জোর দেওয়া হয়েছে কর্মদক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার উপরেও। তবে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আঞ্চলিক ভাষায় পঠনপাঠনের জন্য সিলেবাস তৈরির কথাও বলা হয়েছে কমিটির সুপারিশে।
কস্তুরীরঙ্গন কমিটির বিষয়বস্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন রাজ্য এবং রাজনৈতিক দলগুলি। এমনকী এনডিএ শরিক শিবসেনাও এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার নেতা সন্দীপ দেশপাণ্ডে বলেন, ‘বিজেপি সব সময়ই হিন্দী, হিন্দু এবং হিন্দুত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। আমরা সব সময়ই বলি, হিন্দী বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়। সমস্ত আঞ্চলিক ভাষাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত’। ডিএমকে নেতা এ সর্বাননের কথায়, ‘এই সরকার সব সময় সব কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা এর বিরোধিতা করব। মাতৃভাষা ছাড়া যে কোনও ভাষাই আমাদের কাছে ভিনগ্রহের প্রাণীর মতো’। তেলুগু দেশম পার্টির লঙ্কা দিনাকরের বক্তব্য, ‘কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক’।
আপাতত হিন্দী বলয়ের রাজ্যগুলিতে প্রথম ভাষা হিসেবে পড়ানো হয় হিন্দী। তবে, অনেক অ-হিন্দী ভাষী রাজ্য আছে যেখানে হিন্দী ভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক নয়। তৃতীয় ভাষা বা ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে পড়ানো হয় হিন্দী। এই রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলা, আসাম, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক তেলেঙ্গানা। এই পরিস্থিতি গোটা দেশে হিন্দী বাধ্যতামূলক করতে হলে মোদী সরকারকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।