এককথায় এশিয়া কাপ ফাইনালের দেজা ভু! হ্যাঁ, বৃহস্পতিবার ভারতের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখে মনে হল তেমনটাই। এশিয়া কাপের ফাইনালে টিম ইন্ডিয়ার সামনে মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংস। আর, আজ বিশ্বকাপের ম্যাচে সেই একইরকম ব্যাটিং-ভরাডুবির কবলে পড়লেন কুশল মেন্ডিসরা। উঠল মোটে ৫৫ রান। প্রায় তিরিশ ওভার বাকি থাকতেই ৩০২ রানের বিপুল ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিলেন রোহিতরা। আরও একবার বিধ্বংসী বোলিং করলেন মহম্মদ শামি। ৫ ওভারে ১৮ রান দিয়ে তুলে নিলেন ৫টি উইকেট। ১৬ রানে ৩ উইকেট নিলেন সিরাজ। গত এশিয়া কাপের ফাইনাল মাত্র ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস ধসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর এবারও তাঁর বল সামলাতে হিমশিম খেতে হল শ্রীলঙ্কাকে। দুজনকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন যশপ্রীত বুমরা। ৫ ওভারে ৮ রান দিয়ে ১টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
এদিন শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ধাক্কা দিয়েছিলেন বুমরা। বাকি কাজটা সারলেন সিরাজ। বল হাতে নিয়ে ফের বিপক্ষ ব্যাটিংকে নাজেহাল করলেন তিনি। পাশাপাশি, চলতি বিশ্বকাপে নিজের আগুনে ফর্ম ধরে রাখলেন শামি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন ২২ রানে ৪ উইকেট। এবার নিলেন ১৮ রানে ৫ উইকেট। একইসঙ্গে কাপ যুদ্ধের ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসাবে দুবার ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন শামি। এর আগে এই তালিকায় মিচেল স্টার্কের নাম ছিল। এবার সেই তালিকায় নাম তুলে নিলেন বাংলার পেসার। এদিন প্রথমে বিরাট কোহলি ও শুভমান গিলের জুটি ভারতের ইনিংস গড়তে সাহায্য করে। এবং পরে মিডল অর্ডার কিছুটা ধাক্কা খেলেও, শ্রেয়স আইয়ারের ঝোড়ো ইনিংস ভারতকে বড় রানে পৌঁছে দেয়। ৫৬ বলে ৮২ রান করে শ্রেয়স আউট হয়ে যাওয়ার পর স্লগ ওভারে চালিয়ে খেললেন রবীন্দ্র জাদেজা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান তুলেছিল টিম ইন্ডিয়া। ফর্মে থাকা রোহিত চলতি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পর এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কম রানে ফিরলেন রোহিত শর্মা। মাধুশঙ্কাকে প্রথম বলেই চার মারেন ভারত অধিনায়ক। তবে দ্বিতীয় বলেই ছন্দপতন। বাঁহাতি জোরে বোলারের ভিতরে আসা ডেলিভারির লাইন মিস করতেই বোল্ড হন হিটম্যান। প্রাথমিক ধাক্কার চাপ কাটিয়ে বিরাট কোহলি ও শুভমান গিল দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ১৮৯ রান। শতরান হাতছাড়া করেন দুজনেই। চলতি কাপযুদ্ধে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভালো শুরু করেও শুভমান তাঁর ইনিংসকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে এদিন তাঁকে চেনা আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল। ৯২ বলে ৯২ রানে আউট হন তরুণ ওপেনার। ইনিংসে ছিল ১১টি চার ও ২টি ছক্কা। ৯৪ বলে ৮৮ রানে ফিরলেন। তাঁর ইনিংস ১১টি চার দিয়ে সাজানো ছিল।
আচমকাই ১৯৩-৩ থেকে ১৯৬-৩ হয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে ভারত। ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল শুরুটা ভালো করলেও তাঁর ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ১৯ বলে ২১ রানে আউট হন। তাঁকে আউট করেন দুশ্মন্ত চামিরা। সূর্য কুমার যাদব (৯ বলে ১২) এদিন বেশি রান পেলেন না। তাঁর উইকেটও নিলেন মাধুশঙ্কা। তবে মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরলেও রুখে দাঁড়ালেন শ্রেয়স আইয়ার। ওয়াংখেড়ে তাঁরও ঘরের মাঠ। চলতি কাপ যুদ্ধে উইকেট ছুড়ে আসার জন্য প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন শ্রেয়স। যদিও এদিন কিন্তু একা রুখে দাঁড়ালেন। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৫৬ বলে ৮২ রান। তাঁর ইনিংস ৩টি চার ও ৬টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। শ্রেয়সকেও আউট করেন মাধুশঙ্কা। তবে জাদেজা ৩৫ রানে আউট রান আউট হন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান তুলে দেয় টিম ইন্ডিয়া। এর পর বিপক্ষের ব্যাটিংয়ে ধস নামান শামি-সিরাজ-বুমরাহ। বাকি একটি উইকেট পেয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ম্যাচের সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মহম্মদ শামিকে। ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেল ভারত। পাশাপাশি সেমিফাইনালও পাকা করে ফেললেন রোহিতরা। আগামী ৫ই নভেম্বর ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টিম ইন্ডিয়া।