মঙ্গলবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা পি ভি সিন্ধু। চোটের জন্য আপাতত কোর্টের বাইরে ভারতের এক নম্বর মহিলা শাটলার। এদিন তিনি জানালেন, তাঁর লক্ষ্য দ্রুত ফিট হয়ে কোর্টে ফেরা। দেশকে আরও একটা অলিম্পিক্স পদক দিতে চান সিন্ধু। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তিনি। বেশ কিছু দিন ধরে সেরা ছন্দে দেখা যাচ্ছে না সিন্ধুকে। কয়েক দিন আগে ডেনমার্ক ওপেনে ক্যারোলিনা মারিনের বিরুদ্ধে ম্যাচে মেজাজ হারিয়েছিলেন। তবে সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইলেন না প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। বললেন, ‘‘এ সব খেলার অংশ। বড় কিছু নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজস্ব খেলার ধরন থাকে। কৌশল থাকে। মারিনেরও আছে। সে দিন একটু বেশি চিৎকার করছিল। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। ওটা নিয়ে আর ভাবছি না। আমি সামনে তাকাতে চাই। তা ছাড়া খেলার উত্তেজনার মধ্যে এ রকম হয়েই থাকে।’’ সিন্ধুর বক্তব্য, ‘‘এক নম্বর হওয়া ভীষণ কঠিন। তার থেকেও বেশি কঠিন সেই জায়গা ধরে রাখা। সব ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। কিছু জিতব। কিছু হারতেও হবে। বরং উপরে ওঠা তুলনায় সহজ। তখন সবাই আপনার খেলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে না। শক্তি-দুর্বলতা সব কিছু জানা থাকে না। কিন্তু উপরে উঠে যাওয়ার পর আপনার সব কিছুই প্রতিপক্ষের কাছে পরিষ্কার। তখন লড়াই আরও কঠিন হয়। সেরা পারফরম্যান্স করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ফিট থাকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনও একটা কম থাকলেও কোর্টে নেমে ১০০ শতাংশ দেওয়া যায় না। তবু সব সময় চেষ্টা করি ১০০ শতাংশ দেওয়ার।’’ এখনকার খেলায় মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিক্স। তার আগে বেশ আত্মবিশ্বাসী সিন্ধুকে। বলেছেন, ‘‘জানি না সোনা জিততে পারব কি না। চেষ্টা তো করবই। আসলে ও ভাবে বলা যায় না। তবে দেশকে আরও একটা অলিম্পিক্স পদক দিতে পারব আশা করি। অলিম্পিক্সের আগে ন’মাস সময় আছে। সামনের সব প্রতিযোগিতাই গুরুত্বপূর্ণ। প্যারিসের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এই প্রতিযোগিতাগুলো থেকেই। সেরাটা দিতেই হবে। সে ভাবে প্রস্তুতি নিতে চাই। চোট-আঘাত খেলার অংশ। কোনও খেলোয়াড়ই চোট পেতে চায় না। তাই এ সব নিয়ে বেশি ভাবি না। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। প্রস্তুত হতে হবে। আপাতত যতটা দ্রুত সম্ভব কোর্টে ফিরতে চাই।’’ প্রসঙ্গত, আট বছর বয়স থেকে ব্যাডমিন্টন খেলছেন সিন্ধু। বাবা-মা দু’জনেই ভলিবল খেলতেন। তাঁরা চাইতেন, মেয়েও তাঁদের মতো ভলিবল খেলুক। কেন খেললেন না? সিন্ধুর উত্তর, ‘‘ব্যাডমিন্টন খেলব এটাও তো ভাবিনি প্রথমে। এমনি মজা করে খেলতাম। যেমন সব বাচ্চা খেলে। সেই থেকেই খেলাটা ভাল লেগে যায়। বাবা-মা-ও পরে আর বাধা দেননি। বরং একটা সময় পর দু’জনেই রেলের চাকরি ছেড়ে দেন আমার জন্য। বাবা সব সময় আমার সঙ্গে ঘুরতেন। মা বাড়ি সামলাতেন। আমার কখন কী দরকার, সব খেয়াল রাখতেন। সব কিছু হাতে হাতে এগিয়ে দিতেন। আজ পর্যন্ত যত পদক জিতেছি, প্রতিটিতে আমার বাবা-মার অবদান রয়েছে। তাই আমার সব সাফল্য তাঁদের উৎসর্গ করি।’’ কোচেদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। ‘‘শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত যত জন কোচের কাছে অনুশীলন করেছি, সকলের কাছেই কিছু না কিছু শিখেছি। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কোচেরা পথ না দেখালে কী করে এগোতাম এতটা পথ! তাঁরা তো আছেনই। একদম ছোট থেকে জাতীয় দল পর্যন্ত সব জায়গায় কোচের অবদান রয়েছে’’, জানিয়েছেন সিন্ধু।
পাশাপাশি, সিন্ধু মেনে নিয়েছেন যে অনেক সময় খেলার কৌশল বা ধরন নিয়ে কোচেদের সঙ্গে মতান্তর হয়। সে ক্ষেত্রে কোচের নির্দেশ মতো খেলার চেষ্টা করে দেখেন। ইতিবাচক ফল না পেলে নিজের মতো করে খেলার চেষ্টা করেন। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী সিন্ধু। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় ছবিটা এ রকম ছিল না। সাইনা নেহওয়াল, আমি উঠে এসেছি মেয়েদের মধ্যে। আরও মেয়ে উঠে আসছে। ছেলেরাও খুব ভাল করছে আন্তর্জাতিক স্তরে। এখন আমরা বিশ্ব পর্যায়ে নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছি। দেশে প্রতিভার অভাব নেই। গ্রামে, ছোট শহরে অনেকে খেলতে চায়। কিন্তু তাদের কাছে পরিকাঠামো পৌঁছে দিতে হবে বা পরিকাঠামোর কাছে তাদের নিয়ে আসতে হবে। সরকার এবং ব্যাডমিন্টন সংস্থা চেষ্টা করছে। আরও করতে হবে। হায়দরাবাদ এখন ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ভরকেন্দ্র। বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়েও বেশ কিছু অ্যাকাডেমি রয়েছে। দেশের প্রায় সর্বত্রই এখন ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি রয়েছে। তাই ভাল কিছু আশা করতেই পারি আমরা।’’ একই সঙ্গে সতর্ক করে দিয়েছেন অভিভাবকদেরও। সিন্ধুর বার্তা, ‘‘বাচ্চাকে অ্যাকাডেমিতে পাঠিয়েই ভাববেন না চার বা ছ’মাসে পদক জিতে আনবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। ভরসা রাখতে হবে। ছোটদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। ব্যাপারটা সহজ নয়। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। একটা সময় ৫৭ কিলোমিটার দূরে অনুশীলন করতে যেতাম। পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমই সাফল্য এনে দিতে পারে।’’ সময়-সুযোগ মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপে চোখ রাখতেও ভুলছেন না তিনি। আগেই জানিয়েছেন, ক্রিকেটের প্রতি বিরাট কোহলির নিষ্ঠা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। এদিন তিনি শুভেচ্ছা জানালেন টিম ইন্ডিয়াকে।