চিপকে জয় দিয়েই ২০২৩-এর আইসিসি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল টিম ইন্ডিয়া। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার ১৯৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে যদিও প্রবল চাপে পড়ে ভারত। ২ রানেই চলে যায় ৩ উইকেট। কোনও রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ঈশান, রোহিত ও শ্রেয়স। এরপর ইনিংসের হাল ধরেন বিরাট ও রাহুল। অহেতুক ঝুঁকি না নিয়ে ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে এগোলেন। তাঁদের ১৬৫ রানের পার্টনারশিপই জয়ের ভিত গড়ে দিল। কঠিন পিচে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে নিলেন রোহিতরা। টসের আগে পিচ পরীক্ষক রবি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, খেলা যত গড়াবে তত মন্থর হবে পিচ। ফলে পরের দিকে খেলতে আরও সমস্যা হবে। এই পিচে বড় ভূমিকা নেবেন স্পিনারেরা। সেই পিচে টস হারলেন রোহিত শর্মা। চোখ বন্ধ করে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভাল হয়নি। শূন্য রানে মিচেল মার্শকে আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। স্লিপে চমৎকার ক্যাচ তালুবন্দি করেন বিরাট। দ্বিতীয় উইকেট জুটি বাঁধেন ওয়ার্নার ও স্মিথ। রানের গতি কম হলেও উইকেট পড়ছিল না। ধীরে ধীরে খেলছিলেন তাঁরা। পেসারেরা আর উইকেট না পাওয়ায় স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। তার পরেই ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। ৪১ রানের মাথায় ওয়ার্নারকে আউট করেন কুলদীপ। স্মিথ ও লাবুশেন দলের রান ১০০ পার করেন। স্মিথকে ভাল দেখাচ্ছিল। অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন তিনি। ঠিক তখনই অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা দেন রবীন্দ্র জাডেজা। ৪৬ রানের মাথায় জাদেজার বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন স্মিথ। এর কিছুক্ষণ পরেই এক ওভারে লাবুশেন ও অ্যালেক্স ক্যারেকে আউট করেন জাদেজা। ১১৯ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক দলের রানকে টানলেন। বিশেষ করে স্টার্ক শেষ দিকে কয়েকটি বড় শট খেলেন। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৩ ওভারে ১৯৯ রানে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের হয়ে জাদেজা ৩টি, বুমরা ও কুলদীপ ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মহম্মদ সিরাজ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও হার্দিক পাণ্ডিয়া।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই পরপর ধাক্কা খায় ভারত। স্টার্কের বলে প্রথম ওভারেই আউট হন ঈশান কিষাণ। শুভমন গিল না থাকায় সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তা কাজে লাগাতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন তিনি। পরের ওভারে আঘাত হানেন জশ হ্যাজলউড। প্রথমে রোহিত ও তার পর শ্রেয়স আয়ারকে ফেরান তিনি। দু’জনেই শূন্য রানে ফেরেন। মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় ভারতের। মাথা ঠাণ্ডা রাখেন বিরাট। রাহুলের সঙ্গে জুটি গড়েন তিনি। দৌড়ে রান নিতে থাকেন। তার মাঝেই কামিন্সের বলে বিরাটের ক্যাচ ছাড়েন মার্শ। এরপর আর সুযোগ দেননি বিরাট। রানের গতি কম হলেও উইকেট ধরে রাখেন তাঁরা। দায়িত্ব নিয়ে খেলেন রাহুল। দুই ব্যাটারই নিজেদের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। তাঁরা জানতেন, এই উইকেটে নতুন ব্যাটার নামলে সমস্যায় পড়বেন। ম্যাচ তাঁদেরই শেষ করে আসতে হবে। সেই ভাবেই খেলছিলেন দু’জনে। অস্ট্রেলিয়াকে সমস্যায় ফেললেন তাঁদের স্পিনারেরা। অ্যাডাম জাম্পা হতাশ করলেন। দলকে উইকেট এনে দিতে পারলেন না তিনি। যত সময় গড়াচ্ছিল, তত জয়ের কাছে এগোচ্ছিল ভারত। সব রকম চেষ্টা করেন কামিন্স। কিন্তু কিছুতেই উইকেট আসছিল না। ধীরে ধীরে নিজের শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন বিরাট। কিন্তু ৮৫ রানের মাথায় আউট হলেন তিনি। ততক্ষণে ভারত জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। পাশাপাশি রাহুলের ব্যাটিংও ছিল সাবলীল। শেষ পর্যন্ত ৫২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে গেল ভারত। রাহুল অপরাজিত থাকলেন ৯৭ রানে। ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বুধবার দিল্লীতে দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে ভারত।