বড়সড় বিতর্কের কেন্দ্রে বিজেপি জোট-শাসিত মহারাষ্ট্র। প্রকাশ্যে এল সেই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের করুণ চিত্র। যা দেখামাত্রই শিউরে উঠেছেন সবাই। পানের পিকে ভরে উঠেছে হাসপাতালের দেওয়াল। ধারে লাগানো জলের কলে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছেন জনৈকা মহিলা। পাশেই বসে বাসন মাজছেন আর এক মহিলা। তারপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে শূকরের দল। এটাই নন্দেদে শঙ্কর রাও চভন সরকারি হাসপাতালের দৃশ্য। এই হাসপাতালেই বিগত তিনদিনে ৩৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগী মৃত্যুর কারণ খুঁজতে শুরু হয়েছে তদন্ত। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে এই হাসপাতালে রোগী মৃত্যু শুরু হয়েছে। ওই দিনই ২৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়। তার পরের দিন আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার নতুন করে আরও ৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়। এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৫-এ পৌঁছেছে। এরমধ্যে ১৬ জনই নবজাতক। আরও ৭১ জন রোগীর অবস্থা সংকটজনক। কেন এত রোগী মৃত্যু, তা জানতেই হাসপাতালের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়। আর তাতেই উঠে আসে ভয়ঙ্কর দৃশ্য। দেখা যায়, সরকারি ওই হাসপাতালের ড্রেনে প্লাস্টিক বোতল ও প্যাকেটে ভর্তি। জল যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। ওই নোংরা জলের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে শূকর। তার পাশেই আবার রোগীদের সঙ্গে আসা আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে নিজেদের রোজের কাজ করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
এপ্রসঙ্গে এক মহিলা জানান, প্রতিদিন এই একই দৃশ্য দেখা যায় হাসপাতাল চত্বরে। রোগীর সঙ্গে আগত একজন আবার অভিযোগ করেন, হাসপাতালের শৌচাগার ব্যবহারের উপযোগী নয়। কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। শুধু বাইরে নয়, ভিতরের ছবিও এক। হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই বছরের এক শিশুর বাবা বলেন, “স্যালাইন শেষ হয়ে গেলে, তা বন্ধ করার জন্য নার্সদের ডাকলেও তারা আমাদের দাঁড় করিয়ে রাখেন। অনেক সময় আমাদেরই করতে বলা হয়। নার্সরা বাইরে বসে মোবাইল ঘাটেন। বারবার প্রশ্ন করলে বিরক্ত হন। একবার আমি স্যালাইন বন্ধ করতে গিয়ে মেয়ের হাত থেকে রক্ত বেরিয়ে এসেছিল। নার্সদের বারবার বলেও আনতে পারিনি।” রোগী মৃত্যু শুরু হতেই সোমবার হাসপাতালের এক কর্মী জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে ওষুধ না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। ফলে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। যদিও মঙ্গলবারই সেই বিবৃতি বদলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে। যে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের শেষ অবস্থায় আনা হয়েছিল। যদিও রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, বাইরে থেকে শুধুমাত্র ওষুধই কিনে আনতে হচ্ছে, তাই নয়, সামান্য রক্ত পরীক্ষাও হয় না এই হাসপাতালে। এমআরআই ও সিটি স্ক্যানের মেশিন থাকলেও, তা কাজ করে না একেবারেই। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তোলপাড় সে রাজ্যের একাধিক মহল। সরব হয়েছে বিরোধীরা। নেটমাধ্যমেও বইছে নিন্দার ঝড়।