ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় অমিত শাহর পুত্র তথা তৎকালীন বোর্ড সচিব জয় শাহ-র সঙ্গে তাঁর বিশেষ বনিবনা হচ্ছিল না। যার ফলে আইসিসি চেয়ারম্যানের জন্য ‘মহারাজের’ নাম প্রস্তাব করা দূর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাঁকে উৎখাত করা হয়। বস্তুত সেই ঘটনার পর থেকেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে অমিত শাহদের দূরত্বটাও ধরা পড়তে থাকে। বিজেপির মুখে তারপর আর শোনা যায়নি তাঁর কথা। কিংবা বাংলায় এসে এরপর আর সৌরভের বাড়িমুখো হওয়ার কথা বলেননি অমিত শাহ। কিন্তু বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার স্পেনের রাজধানী শহর মাদ্রিদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌরভের যে ‘পার্টনারশিপ’ দেখা গেল, তা যেন অমিত শাহ-জয় শাহদের প্রতি সৌরভের মধুর প্রতিশোধ।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জগতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনও বড় একটি ব্র্যান্ড। সেই তিনি বৃহস্পতিবার বাংলায় ফুটবল তথা স্পোর্টসের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে লা লিগা মঞ্চে যেভাবে আবেগ ঢেলে দিয়েছিলেন, তা স্প্যানিশ কর্তাদের কনফিডেন্স দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। লা লিগা মঞ্চে সৌরভ শুধু বাংলার ছেলেমেয়েদের খেলাধূলা নিয়ে উৎসাহর কথা বলে থেমে থাকেননি, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন বাংলায় স্পোর্টসের বাজারও বহুমূল্য। এরপর শুক্রবার দুপুরে মাদ্রিদে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সৌরভ ঘোষণা করেছেন, বাংলায় তৃতীয় ইস্পাত কারখানা গড়ে তুলতে প্রায় আড়াই হাজার কোটির বিনিয়োগ করবেন তিনি। সেই সঙ্গে এও জানিয়েছেন, মাত্র-চার পাঁচ মাসের মধ্যেই ওই কারখানা সংক্রান্ত যাবতীয় অনুমতিপত্র তিনি পেয়ে গেছেন। এজন্য মঞ্চে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সৌরভ।
‘দাদা’র ওই ঘোষণার পর ঘরোয়া রাজনীতিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সৌরভ এই ঘোষণাটা কলকাতাতেও তো করতে পারতেন। তা প্রাসঙ্গিক হত। স্পেনে গিয়ে কেন ঘোষণা করলেন? পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এও কৌশলগত। স্পেনের বণিকসভা ও উদ্যোগপতিদের সৌরভ বার্তা দিতে চেয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের ওপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তাই তিনি নির্দ্বিধায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছেন। শুধু তা নয়, সৌরভ এও বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলায় ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ বলে একটা কথা রয়েছে। চার-মাসের মধ্যেই শিল্পের জন্য সবরকম অনুমোদন ও সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়। বাংলার প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এও কি কম কথা!