শুক্রবারই মাদ্রিদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইস্পাত কারখানার জন্য বাংলায় তিনি আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছেন। এর ফলে ৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। জানা গিয়েছে, বাম জমানা পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে ইস্পাত কারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে জিন্দল গোষ্ঠীকে যে জমি দিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার, সেখানেই অব্যবহৃত জমিতে হবে এই সৌরভের ইস্পাত কারখানা।
প্রসঙ্গত, জিন্দলরা বুদ্ধদেব সরকারের থেকে সেই জমি নিলেও ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলা নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। এরপর ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দলদের ঠারেঠোরে হুঁশিয়ারি দিতে থাকেন, জিন্দলরা ওই জমিতে বিনিয়োগ না করলে তিনি ফেরত নিয়ে নেবেন। বস্তুত এতদিনে তার নিষ্পত্তি হয়েছে। গত ২৭ মে শালবনিতে একটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জিন্দলরা ওখানে সিমেন্ট কারখানা করার পরেও অনেকটাই জমি শিল্পের জন্য পড়ে রয়েছে। মমতা বলেছিলেন, ‘জ্যোতিবাবুরা জমি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর আর কিছু হয়নি। জিন্দলদের একটা কারখানা আমি এসে উদ্বোধন করেছিলাম। ওদের শিল্পের জন্য কিছুটা জমি লেগেছে, বাদবাকি জমি ওঁরা ফেরত দিচ্ছেন। ওই জমিতেই বড় ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হবে।’
শালবনীতে জিন্দলদের থেকে ফেরত নেওয়া সেই জমিই ইস্পাত কারখানার জন্য সৌরভকে দিয়েছে মমতা সরকার। উল্লেখ্য, ইস্পাত এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য মোট ৪,৩৩৪ একর জমি সজ্জন জিন্দলদের দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব। কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান ও জিতিন প্রসাদ সেই জমিতে জিন্দলদের কারখানার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল। সেদিন ওই শিলান্যাস অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তাঁদের লক্ষ্য করে ল্যান্ডমাইন হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার পরই সংগঠিত হয়েছিল ‘লালগড় আন্দোলন’।
সেই অস্থির পরিস্থিতিতে শেষমেশ জিন্দল গোষ্ঠী ইস্পাত এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করে। তাই জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েই ছিল। পরে কেবল ১৩৫ একর জমিতে সিমেন্ট কারখানা তৈরি করেছেন জিন্দলরা। ২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কারখানা উদ্বোধন করেছিলেন। ওই কারখানা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি এখন রং কারখানাও গড়ে তুলছে জিন্দলরা। এ ছাড়া সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কর্মী আবাসন মিলিয়ে তাদের আরও ১,২০০ একর জমির লাগবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০০ একর রেখে বাকিটা ফিরিয়ে দিচ্ছেন জিন্দলরা। নবান্ন সূত্রে খবর, বাকি জমির সবটা হয়তো সৌরভকে দেওয়া হবে না। তার কিছুটা অংশ অর্থাৎ ইস্পাত কারখানা গড়তে যতটা জমি প্রয়োজন তা দেওয়া হবে। বাকি জমিতে এরপরেও অনুসারী শিল্পের সুযোগ থাকবে।